।।বিকে রিপোর্ট।।
ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে চলমান নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা।
আগামীকাল সোমবার ফিলিস্তিনি যুবকের ডাকা ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া, আগামীকাল সারা দেশে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল এন্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’। সোমবার ৭ এপ্রিল এ অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। পুরো ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে এটি পালনের ডাক দিয়েছেন তারা।
‘দ্য ন্যাশনাল এন্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন এর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশুদের হত্যা করছে ইসরাইল। লাখো ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার এবং আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার দাবি অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়।
রবিবার ৬ এপ্রিল অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ।
ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন।’
আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘MARCH For Palestine’ এর আহ্বানে সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
নিজের ফেসবুক পোস্টে ছাত্রনেতা এবি জোবায়ের বলেন, আগামীকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে আমাদের মজলুম গাজাবাসী ভাইবোনেরা।
গণহত্যা বন্ধ করার দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস, আদালত সব বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামীকাল ৭ এপ্রিল সারাদিন বাংলাদেশেও জেনারেল স্ট্রাইক পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীকাল আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রাখুন৷ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করুন। চলুন বৈশ্বিকভাবে একযোগে দাবি জানাই, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন।
সাদিক কায়েম বলেন, ইয়া গাযযাহ! তোমাদের শাহাদাত ও লড়াইয়ের প্রতি আমাদের সংহতি। বি-ইযনিল্লাহ, অচিরেই আমরা তোমাদের লড়াইয়ে শামিল হবো। গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। আগামীকাল সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, ‘MARCH For Palestine’ এর আহ্বানে আগামীকাল ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশ করার আহ্বান। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিকাল ৪টায় সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে আগামীকাল সারা বিশ্বব্যাপী হরতাল পালন করা হবে। একই সঙ্গে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান রইল।
রোববার ফেসবুকে নিজের পেজে এক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, ‘মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দল-মতনির্বিশেষে সারা দেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারব না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘এনসিপি, বিএনপি, জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মতনির্বিশেষে বাংলাদেশ ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।’
একই আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।
ফেসবুকে নিজের পেজে তিনি লিখেছেন, ‘গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। আগামীকাল সোমবার, ৭ এপ্রিল “নো ওয়ার্ক, নো স্কুল”— এই কর্মসূচি সফল করুন।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।