।।বিকে রিপোর্ট।।
দেশে আগামীতে মধ্যপন্থার রাজনীতি বিপদের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে তিনি এ কথা বলেন।
আশঙ্কা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, স্থানীয় নির্বাচন আগে নাকি সংসদ নির্বাচন আগে- এটা যারাই বলছে বা যাকে দিয়ে বলাচ্ছে এতে সামনে সেন্টারিস্ট রাজনীতি (মধ্যপন্থার রাজনীতি) বিপদে পড়তে যাচ্ছে কি না, এটার একটা শঙ্কা আমরা টের পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। তিনিও শেখ হাসিনা দ্বারা নির্যাতিত। তিনি ন্যায়সঙ্গত কাজ করবেন, তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি বিকাশিত হবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, রাজনীতিবিদ আছে, গণতান্ত্রিকপন্থায় তারা ক্ষমতায় আসবে- এই ব্যবস্থাটাই আগে করুক। যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের মাধ্যমেই দেশ চলবে স্থানীয় নির্বাচন হবে এবং আরও অন্যান্য সংস্কার হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এই জাতি স্বাধীনতা পেয়েছি। ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে সেই স্বাধীনতা যেন ক্ষুন্ন না হয় সেই দিকটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর আমাদেরকে সেটাই করতে হবে। যে কারণে একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছিল মানুষ কিন্তু তা পায়নি। বারবার দেশের জনগণ অধিকার হারা হয়েছে। দেশ কে চালাবে, কোনো রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় আসবে সেটা তো নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। সেই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো এত লড়াই।
তিনি বলেন, আমাদের যে অর্জন। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে যে গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন যে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে এবং ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটা বড় কাজ। এই কাজটা তো তাদের দেখাতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে। স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপরে সংসদ নির্বাচন হবে। কেন? রাজনীতি কে করবে? কে ক্ষমতায় আসবে- এটা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণের সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। জনগণের যে ক্ষমতা শেখ হাসিনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, র্যাব ধ্বংস করেছিল তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো এত রক্ত ঝরেছে। জনগণের কাছে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বই তো অন্তর্বর্তী সরকারের। সুতরাং স্থানীয় নির্বাচন আগে নাকি সংসদ নির্বাচন আগে এই কথাগুলো আসছে কেন?
বিএনপির এ নেতা বলেন, বিএনপি বলেছে সংসদ নির্বাচন একটি জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিবিদদের কাছে ক্ষমতা থাকবে। ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। জনগণের কাছে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিলে রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হবে এবং সেই রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের মধ্য দিয়ে যত নির্বাচন আছে সেগুলো হবে। এটাই তো বিরাজনৈতিকরণ। কিন্তু বিতর্ক নিয়ে এসেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে। মাথা আগে নাকি লেজ আগে, তা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারণ করতে হবে কোনটা চালিকাশক্তি। মাথা ঠিক থাকলে সবকিছু ঠিক থাকে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায়ন হবে। সেই ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে অন্যান্য নির্বাচন হবে। এখানে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে কি না, আপনারা সেটা দেখবেন।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস না করা অর্থাৎ বিরাজনীতিকরণ। এই বিরাজনীতিকরণ করতে করতে গণতন্ত্রের আজ ভঙ্গুর অবস্থা। এটার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তিকে যদি খাটো করেন তাহলে চরমপন্থার উত্থান হতে পারে। চরমপন্থা শুধু বাম দিক দিয়ে আসে না ডান দিক দিয়েও আসে। এটা মাথায় রাখতে হবে।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, রংপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন। মিলাদপূর্ব সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।