।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কেইথ কেলোগ কিয়েভে পৌঁছেছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে রিয়াদে বৈঠকের একদিন পর কিয়েভে গেলেন কেলোগ।
বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ তিন বছর অতিক্রম করতে চলেছে এবং এর মধ্যেই তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করতে সেখানে গেলেন।
বুধবার (স্থানীয় সময়) এই সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক এই দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা বোঝে।
তিনি ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে ইউক্রেন সফরে গিয়েছেন। কিথ কেলোগ কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইউক্রেনে ইউক্রেনীয় নেতাদের উদ্বেগ ‘শুনতে’ এসেছেন এবং এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে পরামর্শ করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন।
কেলোগ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হোক। তিনি বলেন, এটি ওই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরিকল্পিত বৈঠকের আগেই কিয়েভে পা রেখেছেন তিনি। ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মস্কো টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
সাসপিলন নিউজ আউটলেটের একটি ফুটেজে দেখা গেছে, কেইথ কেলোগ ট্রেনে করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেছেন।
তিনি ইউক্রেনে পা রাখার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা শহরে রাশিয়ার হামলার কারণে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ওডেসার প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তারা এই তীব্র শীতে কোনো ধরনের উত্তাপের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। ১৩টি স্কুল, একটি কিন্ডারগার্টেন এবং বেশ কিছু হাসপাতাল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আঞ্চলিক গভর্নর জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় এক শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কেলোগের সাথে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন- যুদ্ধোত্তর কোনও সম্ভাব্য শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে কোনও আমেরিকান সেনা মোতায়েন করা হবে না। তবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের মতো সহায়তা করার অন্যান্য উপায় রয়েছে।
কিয়েভে এই আলোচনা এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুধবার সংঘাত এবং ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় সমর্থনের বিষয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য ইউরোপীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোসহ ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনকেই এই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত ছিল যুদ্ধ বন্ধ করতে আগেই চুক্তি করে ফেলা। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, আমি শুনেছি, আলোচনায় ডাক না পেয়ে ইউক্রেন ক্ষুব্ধ। তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে। তারা আলোচনার জন্য এত সময় পেয়েছে। তারা তো অনেক আগেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারতো।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, সৌদিতে আলোচনার পর আমি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রাশিয়া কিছু করতে চাইছে। তারা আক্রমণ বন্ধ করতে চাইছে। আমার মনে হয়, এই যুদ্ধ বন্ধের ক্ষমতা আমার আছে।
ইউরোপের দেশগুলোর ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, যদি তারা এটা করতে চায় তো খুব ভালো। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।
সৌদি আরবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। আলোচনার পর লাভরভ বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে কোনো ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুই দেশের প্রতিনিধিদল যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আলোচনা শুরু করবে। ল্যাভরভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা শিগগির আলোচনা শুরু করবেন। মার্কো রুবিওর সঙ্গে তার খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা একে অন্যের কথা শুনেছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, রাশিয়া আগেই বলেছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে সেটা রাশিয়ার কাছে সরাসরি হুমকির মতো বিষয় হবে।
রুবিও বলেছেন, রাশিয়া যে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে, এই বিষয়ে আমার মনে কোনো সংশয় নেই। সব পক্ষকেই কিছু বিষয় মেনে নিতে হবে। তবে সেই বিষয়গুলো কী তা নিয়ে আগে থেকে আলোচনা করতে চাই না। সামনে দীর্ঘ পথ রয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে সেই পথ চলা শুরু হলো মাত্র।