।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি মস্কোয় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে ক্রেমলিন। এটিই আন্তর্জাতিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া।
শুক্রবার ৪ জুলাই এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
যা তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার একটি পদক্ষেপ। এরআগে গত এপ্রিলেই সংগঠনটির ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেয় রুশ সুপ্রিম কোর্ট। ধারণা করা হচ্ছে, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতেই কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে মস্কো।
এদিকে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকেও এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভের সঙ্গে বৈঠকের দৃশ্য দেখা যায়।
মুত্তাকি বলেন, এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আর রাশিয়া সবার আগে এই পথে হাঁটলো।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে বৈধতা দেয়নি কোনো পশ্চিমা দেশ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী শিক্ষা বন্ধ, মৌলবাদী নীতিসহ একাধিক ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে তালেবান সরকারের।
যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে এবং আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করে রেখেছে। আর এর ফলে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
তবে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন রাশিয়া এই পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছিল। এরপর থেকেই তারা তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করে।
২০২২ ও ২০২৪ সালে তালেবান প্রতিনিধিরা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নেয়। ২০২৩ সালে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো সফর করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে “সন্ত্রাসবিরোধী মিত্র” হিসেবে অভিহিত করেন। আর রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালের এপ্রিলে তালেবানকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল।
মূলত রাশিয়া এখন তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক অংশীদার ও আঞ্চলিক সুরক্ষার সহযোগী হিসেবে দেখছে, বিশেষ করে আইএসআইএস-কে মোকাবিলায়। তালেবান এখন পর্যন্ত ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এই অবস্থানকে রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে কাবুলে ব্যবসায়িক কার্যালয় খুলেছে এবং আফগানিস্তানকে গ্যাস পরিবহনের ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে।