।।বিকে রিপোর্ট।।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ায় আগুনে পুড়ে ওই বিএনপি নেতার সাত বছর বয়সী এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন।
শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের সুতার গোপটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সূতারগোপ্তা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল চৌধুরীর টিনশেড বসতঘরের দুই দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ঘরের ভেতরে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে ছিলেন।
আগুনে বেলাল চৌধুরীর আট বছর বয়সী কন্যা আয়েশা আক্তার সানজু অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। একই ঘটনায় তার আরও দুই মেয়ে—সালমা আক্তার স্মৃতি (১৭) ও সামিয়া আক্তার বিথী (১৪) গুরুতর দগ্ধ হয়। এছাড়া বেলাল চৌধুরী নিজেও আহত হন। নিহত আয়েশা আক্তার সানজু ফাইভ স্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এর মধ্যে বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তারকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বেলালকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগুনে বেলাল হোসেনের ঘরটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের খাবার খেয়ে বেলালের পরিবারের সদস্যরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত দুইটার দিকে দরজায় তালা লাগিয়ে ঘরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়, ফলে তা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত শিশুর দাদি হাজেরা বেগম জানান, রাতে ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর জানালা দিয়ে আগুন দেখতে পান। দ্রুত বাইরে এসে দেখেন ঘরের দুই দরজাই তালাবদ্ধ। পরে দরজা ভেঙে বেলাল চৌধুরী নিজেই বেরিয়ে আসেন। এ সময় তার স্ত্রী নাজমা বেগম চার মাস বয়সী আবির হোসেন ও ছয় বছর বয়সী হাবিবকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তবে ঘরের এক কক্ষে থাকা তিন নাতনির মধ্যে ছোট সানজুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীরা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে দরজায়ও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করেছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার দাস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা শঙ্কাজনক। আগুন কীভাবে লেগেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।