।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠকটিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
শুক্রবার ১৮ এপ্রিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ বছর বিরতির পর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ১৭ এপ্রিল ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দফা দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বসে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে এই আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প প্রতিফলিত হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচের নেতৃত্বে ঢাকায় ষষ্ঠ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সৌহার্দ্যপূণ পরিবেশে দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় হয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প প্রতিফলিত হয়।
পাশাপাশি দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন ও জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়। উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্তকরণ, নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাকিস্তান তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়ও বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির প্রস্তাবে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে ও শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
বৈঠকে নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দায় সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ওই সব যোগাযোগ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সংযোগকে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ওই বৈঠকে দুই পক্ষ করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি নৌযান চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানায়। সেই সঙ্গে উভই পক্ষই আবার আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে। তাছাড়া ভ্রমণ ও ভিসা সহজীকরণে অগ্রগতির প্রতিও উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ক্রীড়া, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিতে বড় পরিসরে সহায়তায় বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে উভয় দেশ সার্কের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে মত দিয়েছে। এ সময় কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে পাকিস্তান। এছাড়া বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও সেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তার সঙ্গে বৈঠকে আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাহ্যিক চাপমুক্ত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শিগগিরই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।
বিবৃতির শেষে উল্লেখ করা হয়, পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালোচ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান। দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।