পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি এক নম্বর গ্রেডভুক্ত বিশেষ সংবাদদাতা পদে নিযোগ পেতে আবেদন করি।অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতার যাবতীয় ও চাহিদা মাফিক কাগজপত্র সহ। অন্যান্য পদেরও অন্যান্যদের সাথে আমাকেও ইন্টারভিউতে ডাকা হয়।ইনটারভিউ শেষে আমাকে বলা হয়-আপনি সোজা চলে যাবেনা এবং কারো সাথে কোন কথাও বলা যাবে না. কি জানতে চাওয়া হয়েছে বলাও যাবে না। আমরা আপনার সার্ভিস পেতে আগ্রহী। কথাগুলো বললেন এমডি এবং ইংরেজীতে।
কিছুদিনের মধ্যেই আমি গোপন সুত্রে জানতে পারলাম-বিশেষ সংবাদদাতা পদে একজনকেই নেবে এবং আমাকে নেয়ার জন্যে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমার প্রাপ্ত নম্বার সর্ব্বেচ্চ এবং ২য় জনের সাথে আমার প্রাপ্ত নম্বারের ব্যবধান অনেক বেশী। আমি গোপনে তৃতীয় একটি সুত্রের মাধ্যমে বোর্ড সভার রেজুলেশন হস্তগত করি।
প্রথম ডকুমেন্টে টিক চিহৃ দেয়া আমার নাম দেখতে পাবেন। আমার তখন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ছিল ২৬ বছর। লেখা হয়েছে ১৬ বছর।আমি যাতে নিয়োগ না পেতে পারি কেউ হয়তো য়ড়যন্ত্র করে এটি করিয়েছে। কে করিয়েছে তার নামও আমি গোপনসুত্রে জেনে গেলাম। প্রফেসর ইমাজ উদ্দিন তখন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ( যতদর মনে পড়ে)।
ইতমধ্যেই রেজুলেশনে থাকা অনেকের নিয়োগ হয়ে গেছে। আমি উদ্বিগ্ন।
আমি তখন অন্যান্য বীটের সাথে বিএনপি/ জামায়াত/সংসদ/প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের বীটও কভার করি। আমি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পিএস-১ জনাব মোসাদ্দেক আলীর (ফালু ভাই) সাথে দেখা করে বলি-বাসস-এর এমডি আমাকে নিয়োগ দিচ্ছেন না। আমি বিষয়টি মেডামকে জানাতে চাই। জনাব ফালু বললেন-উনাকে জানালেতো উনি আমাকেই বলে দিতে বলবেন। আমিই বলে দেই।
তিনি ততক্ষনাত এমডি আমান উল্লাহ কবিরকে বলে দিলেন টেলিফোনে।
ঐ দিন বিকেল তিনটায় এমডি আমাকে বাসায় ফোনে বললেন-আপনার নিয়োগপত্র রেডি- নিয়ে যান। আমি বললাম সন্ধ্যার দিকে আসি?উসি বললেন-আরো ভাল হয়্ । আমি এখন একটু বেরিয়ে যাব।
সন্ধ্যার পরে আমি উনার রুমে ঢুকে দেখি উনার সামনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ প্রেসসচিব ও বাসস-র সাংবাদিক জনাব সৈয়দ আবদাল আহমেদ বসা। এমডি আমাকে দেখেই আমার হাত ধরে রুমের বাহিরে সামনের করিডোরে এনে আমার ঘাড়ে দুটো হাত রেখে জড়িয়ে ধরে বললেন-আপনার লেখার হাততো অত্যন্ত শক্তিশালী। আমি একটি জাতীয় দৈনিকের ( আমার দেশ) সম্পাদক পদে সহসা যোগ দেব-আপনাকেও সাথে নিয়ে যাব। বাসস-এতো আপনি ভাল সাংবাদিকতা করতে পারবেন না।
আমি বললাম-নিয়োগপত্রটা এখন দিয়ে দিন। পরে আপনার সাথে সেখানে যাব। তিনি বললেন -কাল দুপুরে আসেন। এরপর তিনি আর আমাকে নিয়োগপত্রটি দিলেন না। শুনতে পেলাম ভেতর থেকে দুজন বাধা দিচ্ছে। অভিযোগ-”শালা ঢুকতে পারলে নিজেতো কাজ করবেই আমাদেরকেও সারাক্ষন কাজে ব্যস্ত রাখবে”। অভিযোগটি সঠিক- আমি নিজেও কাজ করি এবং আমার অধীনস্হ সহকর্মীদেরকেও কাজ শিখাই ও কাজ আদায় করে নেই।
বাসস – এ আমার আর নিয়োগ হচ্ছেনা দেখে আমি আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে সামনে বসিয়ে রেখেই রেড টিলিফোনে তখনকার তথ্য মন্ত্রী (মনে নেই-সম্ভবত তরিকুল ইসলাম) কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি জানান -আমি বাসেতকে ভালভাবেই চিনি। তার হাত খুবই ভাল। আমারতো সাংবাদিক দরকার নেই। আমার মারামারি লোক দরকার। আমার ৭/৮টা ভোট দরকার। শুনা যাচ্ছিল টেলিফোনের কথা।
মওদুদ : তোমাকে ভোট দেবে সমস্যা কি? আমিও বলে দিচ্ছি। তথ্য মন্ত্রী বললেন -ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।
সচিবালয়ের ওপরের তলা ও নীচের তলায় দুজনেরই অফিস। আমি গিয়ে তথ্য মন্ত্রীর রুমে ঢুকলাম। উনি বললেন ,আসেন/আসেন। কে একজন উনার সামনে বসা ছিল-তাকে যেতে বললেন।
তিনি বললেন -আপনি মওদুদ ভাইয়ের কাছে কেন গেলেন। আমার সাথেওতো আপনার ঘনিস্ট সম্পর্ক রয়েছে।আসলে প্রেসক্লাবের নির্বাচনের জন্যে আমার ৭/৮টা ভোট দরকার। আমি বললাম-আপনাকে দেব-সমস্যা কি? এরপর উনি ড্রায়ার থেকে ৭/৮ জনের একটি তালিকা বের করে বললেন-জামায়াতের কামারুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই তালিকাটি এনে আমার ওপর চাপ সৃস্টি করছে এদেরকে বাসস-এ নেয়ার জন্যে-ওখানে তার ঘনিস্ট আত্বীয়ও রয়েছে-চেনেন ওকে? কামারুজ্জামানকে চেনেন?আমি হেসে উঠে বললাম-আমিতো জামায়াতেরও বীট কভার করি।
আমি ওখান থেকে উঠে সরাসরি মতিঝিলে শিল্প ভবনে গিয়ে শিল্প মন্ত্রী ও জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে বিষয়টি অবহিত করলাম এবং জামায়াতের সহকারী সেত্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জামানের নীতিহীন কাজের কথা জানালাম। তিনি আমার হাত থেকে বোর্ডর রেজুলেশনের কপি নিয়ে পড়ে ফেরত দিয়ে কিছুক্ষন মাথা নীচু করে ও মুখ কাল করে রেখে অবশেষে বলেলেন -চা খাও। ঐ সময় ফরহাদ মাজহার নামের এক ব্যক্তিও শিল্প মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে আসায় আমাকে সময় দিতে জনাব নিজামীর একটু দেরী হচ্ছিলো । আমি তখন এক রুমে বসে শুনছিলাম-ফরহাদ মাজহার পাকিস্তান আমলে ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পুরনো সর্ম্পক ঝালাই করার জন্যে সুদিনে জনাব নিজামীর সাথে দেখা করেতে এসেছেন। আমি তখন তাকে চিনি না-কোন ফরহাদ মাজহার তিনি।
প্রায একই কাহিনী আগের সরকারের সময়ও আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে বাসস-এর বার্তা সম্পাদক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে। সময় সুযোগ হলে একদিন লিখবো। তাদের এখন দু;সময়।
বিএনপি -জামায়াতের প্রতি অনুরোধ-এখন আপনাদের সরকার ক্ষমতায়্। আপনারা অতীতের বৈষম্য দুর করার জন্যে ক্ষমতায় এসেছেন্। বাসস-র বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের দিন থেকে আমার নিযোগের বিষয়টি কার্যকর করে আমার বকেযা পাওনা পরিশোধ করুন। অন্যথা আমার মনের এই ক্ষোভ দুর হবেনা এবং বিবেকবান বিধায় আপনারাও স্বস্হিতে থাকতে পারবেন না এবং বেঁচে থাকলে ও এ পেশায় টিকে থাকলে আপনারাও অস্বস্হিতে পড়বেন আমাকে নিয়ে।
লেখাটির সাথে প্রদত্ত বাসস-র বোর্ড সভার রেজুলেশনের কপির কয়েকটি পাতা এখানে ইমেজ আকারে দেযা হল বুঝার ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুবিধার্থে। যদিও এই গুলো খু্বই গোপন বিষয়-কিন্তু,পেশাদার সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের সাথে সম্পৃক্ত বিধায এইগুলো প্রকাশ অযৌক্তিক বা বিধিবর্হিভুত নয়। (মন্তব্য: একটি শব্দও বানিয়ে লেখা হয়নি )