।।বিকে ডেস্ক রিপোর্ট।।
বৈশাখের শেষ দিকে এসে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। টানা ৩ দিনের দাবদাহে পুড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে সারাদেশে। গতকাল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। আর ঢাকায় বিরাজ করছে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
গতকাল শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, গতকাল শনিবার ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সারাদেশের মধ্যে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, দেশের অনেক অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে কিছু এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে আবহাওয়া ডট কমের প্রধান আবহওয়াবিদ মোস্ফা কামাল পলাশ তার পূর্বাভাসে জানিয়েছেন,
রবিবার ১১ মে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা ৪২-৪৩ডিগ্রিপর্যন্ত ওঠার আংমকা করা যাচ্ছে।
সিলেট ও ময়মনসিংহ ছাড়াদেশের ৮ টি বিভাগের সবগুলো জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবহা বিরাজ করার আশংকা করা যাচ্ছে। আজ ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রিওঠার আশংকা করা যাচ্ছে।
প্রসংগত, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা উঠলে তা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ এপ্রিল ঢাকায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল তাপমাত্রা। আর ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি। তার আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকায় পারদ উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
গত বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত শুক্রবার দেশের ৪৫টি জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহী জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও দেশে বেশকিছু জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে উঠেছে।
। শনিবার (গতকাল) রাতে দেশের তিন অঞ্চলে ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণয়ন সৃষ্টি হতে পারে। এটিই পর্যায়ক্রমে ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
বিডব্লিউওটি জানায়, দেশের ওপর দিয়ে শক্তিশালী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেশি। আগামী দুদনি তা অব্যহত থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১৩ মে থেকে তাপপ্রবাহর শক্তি কমতে শুরু করবে ও ১৫ মে চলামান তাপপ্রবাহ পুরোপুরি শক্তি হারাবে।
তবে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ও ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ ১৫ মে পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে, যা আগামী ১৩ মে পর্যন্ত তীব্র থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহের ফলে ১২ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হতে পারে।
আজকের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজও তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যহত থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি অস্বস্তিতে পড়েছেন সকল শ্রেণির মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।
সংস্থাটি জানায়, চলমান এই তাপপ্রবাহের পরপরই দেশের দিকে একটি ক্রান্তীয় আংশিক বৃষ্টিবলয় আসবে, যা আগামী ১৩ মে থেকে দেশের ওপর সক্রিয় হতে পারে এবং আগামী ১৫ মে থেকে দেশের অনেক এলাকায় অধিক সক্রিয় হতে পারে। এই বৃষ্টি বলয়ের জন্য তাপপ্রবাহ কমে যাবে।
এটি একটি শক্তিশালী ও তীব্র বজ্রপাতযুক্ত বৃষ্টিবলয়, যা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে। সক্রিয় থাকতে পারে ১৩-২০ মে পর্যন্ত। বেশি সক্রিয় থাকতে পারে ১৫-১৯ মে পর্যন্ত। এরপর তীব্র তাপপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।