।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ভারতে ৫০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত ছিল। দিন দুয়েক আগে রাজ্যটির ফরিদাবাদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মসজিদটি ভেঙে ফেলে। রাজ্যটিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
বুধবার ১৬ এপ্রিল পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মুসলিম মিরর এবং সিয়াসত ডেইলি।
অবশ্য প্রশাসনের দাবি, এটি বেআইনি স্থাপনা ছিল, তাই নিয়ম মেনেই ভাঙা হয়েছে। এদিকে অর্ধশত বছরের পুরোনো এই মসজিদ ভেঙে ফেলায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মুসলিম মিরর বলছে, হরিয়ানার ফরিদাবাদে অবস্থিত বড়খাল গ্রামের আকসা মসজিদ — যার বয়স প্রায় ৫০ বছর — গত ১৫ এপ্রিল সোমবার ভেঙে দিয়েছে ফরিদাবাদ পৌর কর্পোরেশন। মসজিদ ভাঙার এই সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এই মসজিদটি ভেঙে দেওয়া হয়। এই ঘটনার সময় ওই এলাকায় পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল এবং এমনকি তিনজন সহকারী পুলিশ কমিশনারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অথচ মসজিদ সংক্রান্ত মামলা এখনও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মুশতাক জানান, এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সুপ্রিম কোর্টের কোনও চূড়ান্ত এখনও দেওয়া হয়নি। তাহলে মসজিদ ভাঙা হল কেন? প্রশাসন প্রথমে মসজিদের পাশের দোকানগুলো সরিয়ে দেয়, তারপর মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। তার ভাষায়, সবটা পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। আমাদের কোনো সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
মুশতাক আরও বলেন, মসজিদটি প্রায় ৫০ বছর আগে গ্রামের সাবেক এক সারপঞ্চের দেওয়া জমিতে তৈরি হয়েছিল। ৬০০–৭০০ বর্গগজ জায়গা জুড়ে থাকা এই মসজিদ বহু বছর ধরে এলাকার মুসলিমদের শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ পড়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, এই জমি সংক্রান্ত বিরোধ বহু পুরোনো—প্রায় ২৫ বছরের। এতদিন পর হঠাৎ করে এখন এটাকে অবৈধ বলা হচ্ছে।
অবশ্য প্রশাসন দাবি করছে, এটি বেআইনি স্থাপনা ছিল, তাই নিয়ম মেনেই ভাঙা হয়েছে। ফরিদাবাদ পৌর কর্পোরেশন জানিয়েছে, এটি হঠাৎ নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই মসজিদসহ আরও কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা সরকারিভাবে চিহ্নিত হয়েছিল। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই পদক্ষেপ নিয়েছি।
মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই ঘটনাটি ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে এই ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষত যখন বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন, তখন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে “উস্কানিমূলক ও অমানবিক” বলে মনে করা হচ্ছে।