।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ইসরায়েল ও সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তুরস্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাক।
শুক্রবার ১৮ জুলাই (স্থানীয় সময়) এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি এই তথ্য জানান।
এই চুক্তিকে তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো স্বাগত জানিয়েছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। এটিকে একটি কূটনৈতিক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসনের লক্ষ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
এর আগে টানা চার দিন ধরে সশস্ত্র সংঘাত, ইসরায়েলী হামলা এবং ৩২১ জন নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিবেশী ইসরায়েল ও সিরিয়া।
এক্সবার্তায় টম বারাক বলেন, তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসরায়েল এবং তুরস্ক যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে। আমদের সব দ্রুজ, বেদুইন এবং সুন্নিরা যেন তাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং সব নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন সিরিয়া গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য তথ্য জানতে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাস এবং কানাডার সিরীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু এই দুই কূটনৈতিক মিশনের কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সরকারি স্থাপনাসমূহ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, তারা আরব ধর্মীয় সংখ্যালঘু ড্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় বসবাস করছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার সোয়েইদায় একটি পারিবারিক জমায়েতে হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। এতে নিহত হন কমপক্ষে ১৩ জন এবং আহত হন আরও বহুসংখ্যক। এই বন্দুকধারীরা সবাই সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা’র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস)-এর সদস্য এবং কট্টরপন্থি সুন্নি।
সিরিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর অঞ্চলটিতে নতুন ক্ষমতাকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে সরকারপন্থি বাহিনী ও ড্রুজদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে দশকের পর দশক ধরে চাপা থাকা জাতিগত বিভাজন আবারও সামনে চলে এসেছে।
বুধবারের ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দামেস্কে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনে আঘাত হানার একটি মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে স্টুডিওতে থাকা উপস্থাপক হামলার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে নিচু হয়ে যান।
এই অঞ্চলে সপ্তাহান্তে ড্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, যার মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে গিয়েই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ড্রুজদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। শারা সরকার ড্রুজ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পৃথক একটি যুদ্ধবিরতিতেও সম্মত হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতও ধীরে ধীরে সংলাপের দিকে এগোচ্ছে। তবে একই ভাষণে শারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল তাদের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় এবং সিরিয়াকে একটি অস্থির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়।
সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বুধবার রাতের এক জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, সরকারি বাহিনী সুয়েইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে।
এদিকে গত চার দিনের সংঘাতে মানবিক বিপর্যয়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে সোয়েইদার বাসিন্দারা। খাবার, পানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান প্রায় শেষের পর্যায়ে এবং বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ বন্ধ আছে।
উল্লেখ্য, দ্রুজ মতবাদের অনুসারীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হলেও বেশ প্রভাবশালী। ইরানের সুফি সাধক ও ধর্মগুরু ইসমাইল নাশতাকিন আদ-দারাজি এই মতবাদের প্রবক্তা। আদ-দারাজির অনুসারীরা নিজেদের দ্রুজ বলে পরিচয় দেন। খ্রীস্টিয় নব শতকের শেষ দিকে দ্রুজ মতবাদের উত্থান ঘটে।
দ্রুজ মূলত ইসলামের শিয়া মতবাদেরই একটি শাখা। দ্রুজ ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের আহলে তাওহিদ (একেশ্বরবাদী) বলে প্রচার করেন। মুসলিমদের মতোই তারা আল্লাহ, হযরত মুহম্মদ (স.) এবং চার খলিফায় বিশ্বাস করেন। তবে তারা আরও বিশ্বাস করেন যে মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান।
সূত্র : রয়টার্স