।।ওবায়দুল হক।।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সারা দেশে থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল নেতা-কর্মীদের এখন একটাই লক্ষ্য- জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, মাইক্রোবাসে, ব্যাক্তিগত গাড়ীতে সকলের লক্ষ্য, গন্তব্য এক। সকল পথ এসে মিশছে তিনশ ফিটে বা জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে।
অনেকটা সেই “অল রোডস লিড টু রোম” প্রবাদের মতো ২৫ ডিসেম্বর সকল পথের গন্তব্য “অল রোডস লিড টু জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে”।
প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি জেলা, প্রতিটি গ্রাম থেকে ছুটছে মানুষ। বিশেষ ট্রেন, বাস, মাইক্রোবাসে করে তারা একদিন আগে থেকেই ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন।
যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, ‘তারেক রহমানকে কাছ থেকে একনজর দেখতে যশোরের নানা প্রান্ত থেকে যে যেভাবে পারছেন ঢাকার দিকে ছুটে যাচ্ছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বরণীয় করে রাখতে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অগণিত মানুষের সমাগম হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি’।
যশোর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, বুধবার সকাল থেকে ঢাকাগামী ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ভিড় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। টিকিট না থাকলেও এসব ট্রেনে অনেকেই দাঁড়িয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন।
খুলনা বিভাগের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে যশোরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ ট্রেন, বাস, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত যানবাহণে করে সবাই ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের খবরে উৎফুল্ল ফরিদপুরের নেতাকর্মীরা। তাকে স্বাগত জানাতে সড়ক ও নৌপথে হাজার হাজার নেতাকর্মী ছুটছেন রাজধানীতে। তারা মনে করেন, তারেক রহমানের আগমনে পুনরুদ্ধার হবে গণতন্ত্র, সুরক্ষিত থাকবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসনামলে হামলা-মামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছেন ফরিদপুরের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিবাদের প্রশাসনের হামলায় নেতাকর্মীরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে সড়কে নামলেও খেতে হয়েছে মার।
গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরে ফ্যাসিস্ট বিদায় হলে ঘরে ফেরেন এসব নেতা-কর্মীরা। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে না ফেরায় এক ধরনের শূন্যতায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তবে তারেক রহমান আগামীকাল দেশে ফিরছেন, এমন খবরে স্বস্তি ফিরেছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।
নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার খবরে তারা উচ্ছ্বাসিত। তারা মনে করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে বদলে যাবে দলটির পুরোনো চেহারা, মিটে যাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও।
তারেক রহমানের এ আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে সোমবার থেকেই ফরিদপুর থেকে নেতাকর্মীরা ছুটছেন ঢাকায়। প্রত্যাশা দলের মহানায়কের আগমনকে সফল করে তোলা, সম্ভব হলে কাছ থেকে এক নজর দেখা।
মাদারীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কয়েক ধাপে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর থেকে শুরু করে বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালে পর্যায়ক্রমে নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাত্রা করবেন। কেউ দলীয়ভাবে আবার কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ঢাকার পথে রওনা হচ্ছেন।
জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর উদ্যোগে প্রায় আড়াই শতাধিক বাস ও অনেক মাইক্রোবাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজৈর, সদর, শিবচর, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান জাকির জানান, দীর্ঘদিন পর সরাসরি দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া নেতাকর্মীদের জন্য আনন্দের বিষয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই ঢাকায় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে লঞ্চযোগে ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছেন ভোলার দুই লাখ বিএনপি নেতা-কর্মী।
ভোলা জেলার ৭ উপজেলার নেতা-কর্মীদের জন্য রিজার্ভ করা হয়েছে কমপক্ষে ২০ টি লঞ্চ। তাছাড়া বহু নেতাকর্মী ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে গেছেন। দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোও নিজেদের ভীত ও নেতৃত্ব ধরে রাখতে শত শত বাস, মাইক্রো ও বিভিন্ন রকমের গাড়ি রিজার্ভেশন করে আজ ভোররাত থেকেই ফেরি পারাপারের মাধ্যমে বরিশাল, লক্ষ্মীপুর হয়ে ঢাকার পথে রয়েছেন বলে বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়।
ভোলার জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীকাল দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে জেলার ৭ উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন শাখার নেতা-কর্মীরা ঢাকার ৩ শ’ ফিটের জনসভায় উপস্থিত হওয়ার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি শেষে রওয়ানা করেছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নিজ উদ্যোগে ঢাকায় পৌঁছেছেন, আবার কেউ কেউ আজ (২৪ ডিসেম্বর) রাতে দলবদ্ধভাবে লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন এবং কাল সকালে একত্রিত হয়ে জনসভায় উপস্থিত হয়ে জনসভা শেষে তারা একই লঞ্চে ভোলায় ফিরবেন।
টাঙ্গাইল থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাস ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার এবং একটি ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। টাঙ্গাইল থেকে ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জেলার নেতারা কয়েক দিন ধরে বৈঠক ও সভা করেছেন। উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের সব নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এম এ বাতেন বলেন, আমরা নেতার আসার অপেক্ষায় আছি। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। আমরা রাজনীতি শুরু করেছি, কিন্তু অনেকেই নেতা তারেক রহমানকে দেখিনি। আমি ২০০০ সাল থেকে রাজনীতি শুরু করেছি, কিন্তু নেতাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই তাকে দেখেছি। নেতাকে এক নজর দেখার জন্য আমরা মুখিয়ে আছি।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইলে ১২টি উপজেলা নিয়ে ৮টি সংসদীয় আসন রয়েছে। প্রতিটি আসন ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও ঢাকায় যাবে। উপজেলা গুলোতে ৫০ থেকে ৬০টি বাস রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, প্রত্যেক উপজেলা থেকে প্রায় ৫ হাজার মানুষ ঢাকায় যাবে।
ফেনি জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ফেনী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফেনী-১ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, ফেনী-২ আসনে অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন এবং ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু পুরো বিষয়টি তদারকি ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন। নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। কেউ কেউ আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছে আত্মীয়স্বজনের বাসা কিংবা হোটেলে অবস্থান নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন ঘিরে ফেনী বিএনপির নেতাকর্মীরা ভীষণভাবে উচ্ছ্বসিত। এ উপলক্ষে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে যৌথ সভা করা হয়েছে। সভায় জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নেতাকর্মীদের আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সিলেট থেকে ২০০ বাসে ঢাকা যাবেন নেতাকর্মীরা
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার নেতাকর্মীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মোট ২০০টি বাস ভাড়া করা হয়েছে।
বাসের পাশাপাশি মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহনে করেও নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাবেন। ফলে অংশগ্রহণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট জেলার সবকটি উপজেলা থেকে বুধবার থেকেই নেতাকর্মীরা দলবদ্ধভাবে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। উপজেলা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যাত্রাপথে শৃঙ্খলা ও সমন্বয় রক্ষায় দায়িত্বশীল নেতারা কাজ করছেন।
এদিকে সিলেটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করায় তারা সেখান থেকেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে ঢাকায় সিলেট বিএনপির উপস্থিতি আরও দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন নেতারা।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তাকে স্বাগত জানাতে সারাদেশের মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষও এখন রাজধানীমুখী।
বিএনপি নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে কমপক্ষে এক লাখ লোক ঢাকায় যাবেন তারেক রহমানকে বরণ করতে।
দলের পক্ষ থেকে ভাড়া করা ট্রেন, বাস, মাইক্রো ও হাইয়েসে করে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা যাচ্ছেন তারা। আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ঢাকায় যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করার জন্য মহানগর থেকে অনেকে ঢাকায় চলে গেছেন, অনেকে পথে আছেন।
তিনি বলেন, দুটি ট্রেনের সম্পূর্ণ, আরেকটির অর্ধেক টিকেট পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অন্য ট্রেন থেকেও টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহানগর থেকে ১০০টি বাস ও দেড়শ মাইক্রো ও হাইয়েস ভাড়া করা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেও নিজ উদ্যোগে নেতাকর্মীরা বাস–মাইক্রোতে লোকজন নিয়ে যাবেন। এ রকম আরও ১০০ বাস ও শতাধিক মাইক্রো যাবে। আসলে যে হারে মানুষ যেতে চাচ্ছে গাড়ি না পাওয়ায় সেভাবে আমরা সাপোর্ট দিতে পারছি না।