।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ভারতের চালানো পাকিস্তানের অপারেশন সিঁদুরে শতাধিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি।
বৃহস্পতিবার ৮ মে দুপুরের দিকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে সর্বদলীয় এক বৈঠকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই দাবি করেছেন।
রাজনাথ সিং বলেন, অভিযান এখনো শেষ হয়নি। তবে ভারত আর কোনো হামলা চালাতে চায় না। কিন্তু পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে তার উপযুক্ত জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের কোন কোন স্থানে সন্ত্রাসী ঘাঁটি নষ্ট করা হয়েছে—বৈঠকে বিরোধী নেতাদের বিস্তারিতভাবে তা জানানো হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কংগ্রেস নেতা খাড়গে বলেছেন, তারা (সরকার) যা বলেছে আমরা তা শুনেছি। তারা কিছু তথ্য গোপনীয় থাকবে বলে জানিয়েছেন। আমরা বলেছি, আমরা সবাই সরকারের সঙ্গে আছি।
এর আগে বুধবার ভারতের সরকারের একাধিক সূত্র পাকিস্তানে হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছিল। সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এই হামলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তানে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতভর পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক ডজন ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গুলি চালিয়ে ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী এএফপিকে বলেছেন, গত রাতে ভারত একাধিক স্থানে ড্রোন পাঠিয়ে আরও একটি আগ্রাসনের কাজ করেছে। ভারতের ছোড়া একটি ড্রোন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এই সদরদপ্তরের কাছে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, লাহোরের কাছে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ভারতীয় একটি ড্রোন আঘাত করেছে। এতে সেখানে অন্তত চার সৈন্য আহত হয়েছেন। এর আগে, তিনি বলেছিলেন অভিযান এখনও চলছে। ভারতীয় ড্রোনের আঘাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সিন্ধুতে এক বেসামরিক নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ড্রোনের বিধ্বস্ত স্থলে অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছেন। এ সময় অনেকেই সামরিক স্থাপনার কাছাকাছি ভিড় জমান। লাহোরজুড়ে বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাচি বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ ও লাহোরে বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে।
এদিকে ভারতেও সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যাঘাতের পর দেশের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের সীমান্তবর্তী বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে।
এ কারণে বিমান চলাচলেও নানা ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ৪৩০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, আকাশ এয়ারসহ বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলোর প্রত্যেককেই বহু ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে।
উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রাখার ফলে দিল্লি বিমানবন্দরের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লাইটরাডার-এর তথ্য অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত আকাশসীমা প্রায় বন্ধই বলা যায়।
সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি।