শিরোনাম :
উপদেষ্টা পরিষদে ২টি অধ্যাদেশ, ২টি নীতিমালা অনুমোদন এনসিপি গেলে সাদরে বরণ, জবির ছাত্রদের টিয়ারশেল-এই বিভাজন কেন? রিজভী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ও নাশকতার ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে : ডিএমপি কমিশনার কমিশনের কিছু প্রস্তাব দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং : বাসদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান চলছে মেক্সিকোতে তিন গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২১ দ্বিতীয় দিনের মত কাকরাইল মোড় অবরোধ করে জবির আন্দোলনকারীরা : তীব্র যানজট ঢাকার সবুজায়নে ১ জুন থেকে বৃক্ষরোপণ শুরু : ডিএনসিসি প্রশাসক উপদেস্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় নিন্দা জানালেন নেতৃবৃন্দ উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় জবি শিক্ষার্থীদের বোতল নিক্ষেপ

উপদেস্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় নিন্দা জানালেন নেতৃবৃন্দ

  • আপলোড টাইম : ১২:২৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
  • ১৬ Time View
ছবি: বিকে

।।বিকে রিপোর্ট।।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করার সময় ন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উপর বোতল নিক্ষেপ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগানও দেন।

বুধবার ১৪ মে রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে কাকরাইল মসজিদের সামনে গিয়েছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তার মাথায় উড়ে এসে একটি প্লাস্টিকের বোতল লাগে। ধারণা করা হচ্ছে, ভিড় থেকে কেউ তাকে লক্ষ্য করে বোতলটি ছুড়ে মেরেছেন।

এ বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যাদেরকে আমি স্যাবোট্যুর মনে করি তারা এ কাজটি ঘটিয়েছে। তারা আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে আন্দোলন স্যাবোটাইজ করে।

বোতল ছুড়ে মারার ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক বোতল ছুড়ে মারে। ওই যুবকের মাথায় ছিল ক্যাপ। পাশেই ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ ওই যুবককে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেও দেখা যায় ভিডিওতে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা।

মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা হয়েছে, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কী হতে পারে, সেই প্রশ্নও করেছেন তারা।

মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটিকে ‘হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, সঙ্গে নিন্দা জানাই, যারা উল্লাস করছেন তাদেরও। হামলাকারী কোন ইনটেনশনে (উদ্দেশ্যে) হামলা করেছে, তা এখনো অজানা। সেটা খুঁজে বের করা হোক। এই হামলাকে জাস্টিফিকেশন (ন্যায্যতা) দেওয়ার সুযোগ নেই। দোষীকে আইনের আওতায় আনা হোক। সঙ্গে যেসব ন্যায্য দাবি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসেছেন, সেসব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, মাহফুজ আলম শিক্ষা উপদেষ্টা নন কিংবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। তারপরও তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার একজন প্রতিনিধি হিসেবে। আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে।

তিনি নিজের অফিস কিংবা প্রশাসনিক জায়গায় আপনাদের না ডেকে বের হয়ে রাজপথে আপনাদের কাছে গিয়েছেন। এরপর তার সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে, সেটার জন্য আপনাদের প্রতি ধিক্কার।

আপনাদের আগে কমিটমেন্ট দেওয়ার পরও কেন কাজগুলো বাস্তবায়ন হলো না, সেটার জন্য আপনাদের তো শিক্ষাসচিবকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। শিক্ষা উপদেষ্টাকে জবাবদিহি করানো উচিত। সেটা না করে যিনি আপনাদের কথা শুনতে গিয়েছেন, আপনারা তাকে আঘাত করেছেন!

গত মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন উল্লেখ করে সারজিস লেখেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে মাহফুজ ভাইকে জানাই। তিনি আজকে রাতে নয়টায় আপনাদের মিটিংয়ের সময় দেন এবং এটাও বলেন যে আগামীকাল শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন।

তারপর তিনি এটাও বলেছেন, এই দুই জায়গায় সমস্যাগুলোর কাঙ্ক্ষিত সমাধান না পেলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন। তারপরও আপনারা আপনাদের মতো করে কর্মসূচি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় সুশীল উপদেষ্টার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তারা জনগণকে ডিল করতে ভয় পায়। তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় না হলেও ছাত্র উপদেষ্টাদের পাবলিক ডিলিংস করতে সামনে ঠেলে দেওয়া হয়।

মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজ আলম সমস্যা সমাধানে গিয়েছিলেন। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

এ কথা স্পষ্টভাবে মনে রাখা প্রয়োজন—আপনাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি বলেই তিনি আপনাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু এ ধরনের উগ্র ও হঠকারী আচরণ ভবিষ্যতে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। মাহফুজ আলম আইনি পথে হাঁটবেন কি না, জানি না। তবে আন্দোলনের নেতৃত্বের উচিত প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং ভবিষ্যতে এমন ন্যক্কারজনক আচরণের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লেখেন, সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা এবং সেটির কোনো যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা নেই। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণও সন্দেহজনক। সব জনদাবির সম্মুখে ছাত্র উপদেষ্টাদের ঠেলে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেটির বিষয়ে কেন এখনো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেটিও এই অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আজ মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা করেছেন, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কী হতে পারে! মতের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু মনে রাখবেন মাহফুজ আলম আমাদের ভাই। ভাইয়ের সম্মানে আঘাত করতে আইসেন না।

এখানে উল্লেখ্য যে, তাৎক্ষণিকভাবে বোতল নিক্ষেপকারীর পরিচয় জানা না গেলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ভিডিও দেখে ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। জানা যায়, বোতল ছুড়ে মারা যুবকের নাম ইশতিয়াক হোসেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

বোতল নিক্ষেপের ঘটনার পর রাতেই ওই শিক্ষার্থীর পরিচয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিতে থাকেন। ‘জবিয়ান্স’ নামের একটি পেজের পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার (বোতল নিক্ষেপকারী) নাম ইশতিয়াক হোসাইন। ডিপার্টমেন্ট অর্থনীতি, ব্যাচ ১৯। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও সন্দেহভাজন যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।  

তবে তারা জানায় সন্দেহভাজন যুবককে খুঁজছে পুলিশ। ওই যুবককে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দিগ্ধ এক যুবকের ছবি প্রচার হয়েছে৷ তথ্য ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথা লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপ করার ঘটনায় সন্দিগ্ধ ওই যুবককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। একাধিক টিম কাজ করছে।

উল্লেখ্য, জবির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনমুখী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। ড়ুলিস্তানের বাঁধা উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যায়। পরে মৎস ভবন মোড়েও তাদের বাঁধা দেয়া হয়। সেটিও তারা উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়। পরে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

সেখানে এক পর্যায়ে পুলিশের বাঁধা ভাঙ্গার চেষ্টা করলে বাদানুবাদের মাঝে আক্রমনাত্বক হয়ে উঠলে ‍ুপলিশ লাঠিচার্জ করে। টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি ছুড়ে শিক্ষার্থদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আবারও ছাত্ররা একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখে। এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরেও সড়ক ছেড়ে যাননি তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যমুনায় যান বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যসহ একটি দল। পরে রাতে উপদেষ্টা মাহফুজকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হন জবি উপাচার্য।

উপদেষ্টা মাহফুজকে শিক্ষার্থীদের সামনে কথা বলতে বলেন জবি উপাচার্য। পরে মাহফুজ বলেন, মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল এবং বলেছিলাম আমরা বসবো। কথা ছিল শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা বসে আলোচনা করে এ বিষয়টি সমাধান করব। যেহেতু আপনারা ন্যায্য মনে করে দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। এভাবে আন্দোলনে হয়তো একটু উসকানি হয়েছে।’

এ সময় মাহফুজ কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের মাঝে তার মাথায় পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়। পরে তিনি কথা থামিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech