।।বিকে আন্তর্ঝাতিক ডেস্ক।।
দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েই সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক যুদ্ধে সমানে সমান লড়ছে চীন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রাসী শুল্কনীতি ঘোষণার পর থেকেই শুল্কযুদ্ধে একপ্রকার বেপরোয়া ভূমিকায় নেমেছেন শি জিনপিং।
হোয়াইট হাউজ ঘোষণা দেয়, চীনের পণ্যে মোট ১৪৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। জবাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫% করে (আগে ছিল ৮৪%)।
শুক্রবার ১১ এপ্রিল চীনের অর্থমন্ত্রী নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের এ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল শনিবার থেকে এ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
শুল্ক বাড়িয়ে ট্রাম্প চীনের অর্থনীতিতে আঘাত হানার চেষ্টা করছেন, আর শি পাল্টা জবাব দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছেন, এই চাপ সামলানোর ক্ষমতা চীনের রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘গুণ্ডামি’র বিরুদ্ধেও অবস্থান নিচ্ছেন তিনি।
গত সপ্তাহ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আচরণ আসলে সুপরিকল্পিত এক কৌশলেরই অংশ—যেখানে শি তার জনগণকে দেখাতে চাইছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলায় তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন মাসের জন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলেও চীনের ওপর উচ্চ শুল্কহার বজায় রেখেছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বেইজিং বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ‘অস্বাভাবিক উচ্চ শুল্ক’ আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বাণিজ্যনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ বিচার-বিবেচনার গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। এটি সম্পূর্ণরূপে একতরফা গুন্ডামি ও জবরদস্তি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ লড়াই কেবল অর্থনীতির নয়, বরং আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারেরও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যান্ড চায়না রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক জুড ব্লশেট বলেন, এটা সেই অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক বাস্তবতা, যার জন্য চীন বহুদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্যদিকে গবেষক নেইল টমাস মনে করেন, শি জিন পিং বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, যা বহু দেশকে চীনের দিকে টেনে আনবে।”
শুল্ক ছাড়াও চীনের হাতে রয়েছে আরেকটি শক্তিশালী পাল্টা পদক্ষেপ—বিরল খনিজ উপাদান। চীন বিশ্বের পরিশোধিত বিরল খনিজের ৯০% উৎপাদন করে। এই উপাদানগুলো ব্যবহার হয় প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিকস, ক্লিন এনার্জি ও ইভি শিল্পে। যুক্তরাষ্ট্র এই খনিজের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং বেশিরভাগই নেয় চীন থেকে।
এ ব্যাপারে টমাস বলেন, চীন যদি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চীন চাইলে বিদেশি কোম্পানির বাজারে প্রবেশেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এমনকি হলিউডের সিনেমা নিয়েও হুমকি দিয়েছে বেইজিং, যদিও সেটি তুলনামূলকভাবে ছোট প্রতিশোধ।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের উপদেষ্টা স্কট কেনি বলেন, ট্রাম্প যদি সাময়িকভাবে শুল্ক স্থগিত করেন, চীন সেটা তার দুর্বলতা হিসেবেই দেখবে। তারা সময় নিচ্ছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এই শুল্কযুদ্ধ আপাতত থামার লক্ষণ নেই। দুই পরাশক্তির সংঘর্ষে বিশ্ব অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এক অনিশ্চয়তার প্রান্তে। শি জিনপিং চাইছেন, জনগণকে দেখাতে—চীন কেবল প্রতিরোধই নয়, পাল্টা আঘাতেও সক্ষম। আর ট্রাম্প, কৌশলে কিংবা চাপে, চুক্তির দিকে তাকিয়ে আছেন।