।।বিকে রিপোর্ট।।
বৈরী আবহাওয়ায় ইয়েমেন উপকূলে অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। এতে কমপক্ষে ৬৮ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭০ জনেরও বেশি অভিবাসী। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে দেড় শতাধিক অভিবাসী ছিলেন এবং নিহতরা সবাই আফ্রিকান।
সোমবার ৪ আগস্ট এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইয়েমেন উপকূলে আফ্রিকার অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় দেড়শ যাত্রী বহনকারী নৌকাটি উল্টে গেলে মাত্র ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইওএম প্রধান আবদুসাত্তোর এসোয়েভ জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খানফারের তীরে ৫৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এবং আবিয়ান প্রদেশের রাজধানী জিঞ্জিবারের একটি হাসপাতাল মর্গে ১৪ জনের লাশ নেওয়া হয়েছে।
আইওএম-এর ইয়েমেন শাখার প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, নৌকাটিতে ১৫৪ জন ইথিওপিয়ান নাগরিক ছিলেন। এটি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশের উপকূলে ডুবে যায়।
জাঞ্জিবার শহরের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল কাদের বাজামিল জানান, নিহতদের দাফনের জন্য শহরের শাকরা এলাকার কাছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, হর্ন অব আফ্রিকা থেকে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী অভিবাসীদের জন্য ইয়েমেন একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। আইওএমের হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শত শত অভিবাসী নৌকাডুবিতে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। কেবল ২০২৪ সালেই ৬০ হাজারের বেশি অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন।
মূলত সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশের সংঘাতপীড়িত মানুষজন ইয়েমেনে আশ্রয় নিতে বা সেখান দিয়ে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে যাত্রা করতে গিয়ে এই বিপজ্জনক পথে পাড়ি দিচ্ছে। আইওএম-এর মতে, এটি বিশ্বে অন্যতম ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন রুট। এই পথ ধরে ইয়েমেনে পৌঁছাতে অভিবাসীরা প্রায়ই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকায় লোহিত সাগর পাড়ি দেন।
আইওএম-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন, যা আগের বছরের ৯৭ হাজার ২০০ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আইওএম-এর মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা কমেছে।
এই পথে গত দুই বছরে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আইওএম জানায়, গত বছর এই রুটে ৫৫৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া গত এক দশকে এই পথে কমপক্ষে ২ হাজার ৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৯৩ জনের ডুবে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে ইয়েমেনে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী অবস্থান করছেন।
আইওএমের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এই হৃদয়বিদারক প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত এবং অভিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সংস্থাটি আরও জানায়, ‘এ ধরনের ঘটনা দেখিয়ে দেয় কার্যকর সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা কতটা জরুরি, বিশেষ করে অসাধু দালালরা যখন অভিবাসীদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিপজ্জনক যাত্রায় ঠেলে দেয়।’
চলতি বছরের মার্চে ইয়েমেনের ধুবাব জেলার উপকূলে ১৮০ জনের বেশি অভিবাসী বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে যায়; তখন কেবল দুজন ক্রুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং বাকি সবাইকে নিখোঁজ বা মৃত হিসেবে ধরা হয়। আইওএমের ‘মিসিং মাইগ্র্যান্টস প্রজেক্ট’ এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে এই পথে ৩,৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন, এর মধ্যে নৌকাডুবিতে মারা গেছেন ১,৪০০ জন।