।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন দুই দেশ একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং একটি নির্ধারিত সময়সীমার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।
শুক্রবার ১১ জুলাই এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এএফপি জানায়, বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানান। সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এমন ধরনের ২০টিরও বেশি চিঠি গেছে বিশ্বের নানা দেশের নেতার কাছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই হুমকিতে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিবিসি বলছে, প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের এই চিঠিটি মূলত এমন ২০টিরও বেশি চিঠির একটি, যেগুলো ট্রাম্প এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারদের – যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা – উদ্দেশে প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এসব দেশের ওপরও আগামী ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।
অবশ্য কানাডার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতোমধ্যেই আরোপ করা হয়েছে, তবে বর্তমানে উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় কিছু পণ্যে ছাড় রয়েছে। তবে নতুন যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন, তা এই চুক্তিভুক্ত পণ্যের ওপরেও কার্যকর হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এই ৩৫ শতাংশ শুল্ক হবে আগের খাতভিত্তিক শুল্ক থেকে আলাদা। উল্লেখ্য, এর বাইরে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ৫০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া গাড়ি ও ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েছেন।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মাধ্যমে তাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পণ্যের বাজার ধরে রেখেছে। উত্তর আমেরিকার এই দেশটি গাড়ি উৎপাদন এবং ধাতু সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র, ফলে এসব খাতে এই শুল্ক ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, “আপনারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা কারখানা নির্মাণ করেন, তাহলে কোনো শুল্ক দিতে হবে না।”
এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবেশ ঠেকাতে কানাডার ব্যর্থতা, কানাডার দুধশিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরোপিত শুল্ক এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে এই নতুন শুল্কের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা ৩০ দিনের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য ও নিরাপত্তা চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। সেই অনুযায়ী ২১ জুলাই ছিল নির্ধারিত সময়সীমা।
এরপরই ট্রাম্পের চাপে কার্নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে একটি কর তুলে নেন, যেটিকে ট্রাম্প “স্পষ্ট আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছিলেন। কার্নি বলেছিলেন, “বড় একটি আলোচনার অংশ হিসেবে আমরা এই কর তুলে নিয়েছি।”
অবশ্য ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণার বিষয়ে কানাডার পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি