।।বিকে রিপোর্ট।।
দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে প্রায় ১৮ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর স্ত্রী ও কন্যাসহ সপরিবারে দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি অবতরণ করবেন। বিমানবন্দর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনি সরাসরি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকার সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন’ করতে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকা সংলগ্ন সড়কে জোরেশোরে চলছে সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরির কার্যক্রম।
মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চের পরবর্তী অংশ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। আর কুড়িল মোড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। ইতোমধ্যে মঞ্চের মূল কাঠামোর কাজ শেষ। এখন ডেকোরেশনের কাজ চলছে। মঞ্চের দুই পাশে তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো হচ্ছে মাইক।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মঞ্চের কাজ তদারকি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। মঞ্চের অদূরে পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
দুই দিন থেকেই তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে এখনই বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে কুড়িল সংলগ্ন সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভ করছেন, আবার কেউবা ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে এবার বাংলাদেশে’— এমন নানা স্লোগান দিয়ে এলাকা মুখরিত করে তুলছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে মঞ্চ তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি, আজ-কালের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
বিমানবন্দর এলাকার পাশাপাশি পুরো রাজধানীর অলিগলি, দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অংশ এবং দুই পাশের সড়কে শোভা পাচ্ছে তারেক রহমানের বিশালাকার ছবি ও ব্যানার। এ ছাড়া তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীও ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
প্রস্তুত বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বাস
তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি বুলেটপ্রুফ ‘হার্ড জিপ’ গাড়ি দেশে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো মডেলের এই গাড়িটি ইতোমধ্যে বিএনপির নামে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ছাড়া তার জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস আনা হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। এ ছাড়া, দলের বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়েও একটি বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন রুটে ১০টি ট্রেন পাচ্ছে বিএনপি
তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন। তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দ করেছে রেলওয়ে। পাশাপাশি ২৫ ডিসেম্বর বিশেষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে নিয়মিত চলাচলকারী তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার, জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়, খুলনা-ঢাকা-খুলনা, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী এবং যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে।
এ বাবদ রেলওয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০২৫ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ২০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দলের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল বহরসহ ঢাকায় আসবেন।
তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে— সেই লক্ষ্যে স্মরণীয় করে রাখার মতো সব আয়োজন করা হচ্ছে।