Breaking News:


শিরোনাম :

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলী হামলা : নিহত ৫০ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে : আনরো প্রধান

  • আপলোড টাইম : ১১:৩৪ এএম, সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
  • ১৪ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সহায়তা নিতে আসা ক্ষুধার্ত ও অনাহারি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনায় প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে।

সোমবার ২ জুন মিডল ইস্ট মনিটর এর উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়া এ খবর জানায়। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২শ’ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল রবিবার ভোরে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সহায়তা গ্রহণের জন্য জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির উপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে ইসরাইলি বাহিনী।

এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান বলেছেন, গাজা ‘ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র একটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।’ রবিবার সকালে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ‘ব্যাপক হতাহতের’ ঘটনা ঘটেছে বলে চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আনরো প্রধান একথা বলেছেন।

ফিলিপ লাজ্জারিনি এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, সহায়তা বিতরণ অবশ্যই নিরাপদে হওয়া উচিত। গাজায় এটি কেবল আনরোসহ জাতিসংঘের মাধ্যমেই করা যেতে পারে।

ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর ওপর চালানো গণহত্যায় নীরবতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ বলেন, গাজার ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ইসরাইলি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণহত্যা চালাতে ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণ বিতরণের নামে নতুন কৌশল কাজে লাগাচ্ছে।

অবরুদ্ধ উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটে আছেও বলে জানান মুনির।

জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সতর্ক করে জানায়, গাজায় চরম খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে গাজায় অনাহার, অপুষ্টি ও মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহভাবে বেড়েছে।

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে অনাহারে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যা এখন শতভাগে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) বলেছে, গাজা ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থানে’ পরিণত হয়েছে এবং অবরুদ্ধ এই উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জেন্স লারকে জানান, গাজায় শতভাগ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস মানবিক সাহায্যের জন্য আসা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য জাতিসংঘের প্রতি একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অবরুদ্ধ গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য মানবিক সাহায্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

এদিকে সিএনএন-এর একটি ভিডিও’তে দেখা গেছে রাস্তায় পড়ে থাকা আটা তুলে নিচ্ছিলেন এক মা। কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা থেকে ময়লাযুক্ত আটা তুলে নিচ্ছেন এক নারী। আটার বস্তা না পাওয়ায় রাস্তায় পড়ে থাকা আটাই কুড়িয়ে নিতে থাকেন তিনি। আল্লাহর কাছে বিচার চাইলেন ইসরাইলিদের নৃশংসতার।

চিৎকার করে আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দেন। ভিডিওটি প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, গেল ৩১ মে গাজার এক মায়ের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে খান ইউনিসে।

ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সবকিছু সুন্দরভাবে সমাধান করার ক্ষমতা তার আছে। তোরা (ইসরাইলকে উদ্দেশ্য করে) আমাদের অভুক্ত রেখেছিস, কুকুর।

এরপর আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিচার দিয়ে তিনি বারবার বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ আরবদের বিচার করুক।’

অবরুদ্ধ গাজায় শুধু ফিলিস্তিনিদের প্রাণে মেরেই থামছে না দখলদার ইসরাইল, সেখানকার বাসিন্দাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে দুর্ভিক্ষের মুখেও। ইসরাইলি অবরোধে সব হারানো অসহায় ফিলিস্তিনিরা এখন পড়েছেন তীব্র খাদ্য সংকটেও।

সিএনএন জানিয়েছে, ইসরাইল গাজায় অবরোধ আরোপ করে রাখায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে আসছে। যার চিত্র এখন ফুটে উঠছে। যদিও অনেকের মতে, গাজায় ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ চলছে।

এদিকে এছাড়া গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙ্গে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বা রাস্তায় পড়ে রয়েছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি কারণ উদ্ধারকারী দলগুলো সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।”

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech