।।বিকে স্পোর্টস রিপোর্ট।।
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়ে দেশে পৌঁছেই জমকালো সংবর্ধনা পেয়েছেন পিটার বাটলারের দল।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাফুফের বাসে করে হাতিরঝিলের এম্পিথিয়েটারের মঞ্চে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ মঞ্চের স্বপ্নের প্রতিশ্রুতি দিলেন ঋতুপর্ণা-আফঈদারা।
রবিবার ৬ জুলাই প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে ওঠার ইতিহাস গড়া মেয়েদের জন্য রাতেই অভিনব সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
মিষ্টি মুখ করে রাত ২টা ২৯ মিনিটে খেলোয়াড়, কোচ, টিম স্টাফদের নিয়ে টিম বাস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয় হাতিরঝিলের উদ্দেশে। তাতে করে আড়াইটায় সংবর্ধনা দেওয়ার নির্ধারিত সময়ের আয়োজন গিয়ে পৌঁছায় আরও গভীর রাতে।
রাত তিনটার একটু পর আলো ঝলমলে হাতিরঝিলের মঞ্চে আসেন খেলোয়াড়, কোচ, টিম স্টাফরা। সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাফুফের কর্মকর্তারা। এসময় হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন ঋতুপর্ণা-আফঈদারা।
মঞ্চে জয়ী দলের সবার সামনে ঢাউস বোর্ডে লেখা ছিল ‘কোয়ালিফাইড’। একটু পর উপস্থাপক নিজেই গিয়ে মেয়েদের হাতে তুলে দেন জাতীয় দলের পতাকা। শুরু হয় কনফেত্তির ওড়াউড়ি। বাজতে থাকে রক মিউজিক। আর আলোর রোশনাই তো ছিলই। এরপর ব্যান্ড মিউজিকের তালে বেজে ওঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম…. শতদল” সঙ্গীত।
এত রাতেও সমর্থকদের অনেকেই এসেছিলেন মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে। করতালি ও স্লোগানে তারাও মুখরিত করে রাখেন চারপাশ।
সাবেক তারকা ফুটবলার ও ঢাকা উত্তরের বিএনপির নেতা আমিনুল হক মঞ্চে এসে স্বাগত বক্তব্যে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল ক্রেজ এটাই। বাংলাদেশের মানুষ যে ফুটবলকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, এটাই তার প্রমাণ।’
এশিয়ান কাপ থেকে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মঞ্চে মেয়েরা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদও জানান আমিনুল।
মিয়ানমার ম্যাচে জোড়া গোল করা ঋতুপর্ণা চাকমা এশিয়ান কাপের সেরা ছয় দলের মধ্যে থেকে বিশ্বকাপে খেলার আশাবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি দর্শকবৃন্দকে। এত রাতে আমাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য। সভাপতি ও কিরণ ম্যাডামকে অভিনন্দন এত কষ্ট করে এই আয়োজন করার জন্য। আজকে আমরা এখানে এসেছি দলীয় প্রচেষ্টায়, ফুটবল কোনও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর খেলা নয়।
অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তির কণ্ঠেও ছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে ওঠার দারুণ প্রত্যয়, প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাবিথ আউয়াল স্যার, কিরণ (মাহফুজা আক্তার) ম্যাডামসহ সবাইকে এত রাতে এত সুন্দর একটা আয়োজনের জন্য। কিরণ ম্যাডামকে ব্যক্তিগতভাবে আমার কৃতজ্ঞতা… এই মুহূর্ত ভোলার মতো নয়। কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে পারি।
কোচ পিটার জেমস বাটলার সালাম দিয়ে বললেন, আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবো। কারণ সকাল হতে বেশি দেরি নেই। আমি এই সময়ে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। প্রথমত বাফুফে সভাপতি, মিস কিরণ, কমিটির সদস্য, সব খেলোয়াড় এবং টিম স্টাফ সবাইকে কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ছাড়া আমরা এখানে আজ থাকতে পারতাম না। বিশেষ করে সমর্থকদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এত রাতেও তারা এসেছেন, আমি আন্তরিকভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
বাটলার আরও বলেছেন, এটা কঠিন একটা সপ্তাহ ছিল এবং আমি বলবো, সম্ভবত এটা স্রেফ কঠিন একটা সপ্তাহ ছিল না, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সবশেষ ৯ থেকে ১২ সপ্তাহ আমাদের অনেক কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গত বছর থেকে যেটা শুরু হয়েছিল, আমাদের ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। টালমাটাল সময় ছিল। তবে, এই মেয়েদের ছাড়া আজ আমরা এখানে থাকতে পারতাম না। মেয়েরা যা করেছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ। টিম স্টাফসহ সবাইকে ধন্যবাদ।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুরুতেই প্রশংসায় ভাসান ঋতুপর্ণা চাকমাকে। সামনের পথচলায় মেয়েদের জন্য শুভকামনাও জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রথমত খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ। আপনারা দুর্দান্ত। আপনাদের খেলা আমি দেখেছি। আমি কিছুদিন আগে, বোধহয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জয়ের পর আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের মধ্যে ঋতুপর্ণা আমার ফেভারিট। আমি একটু কারেকশন করতে চাই। আপনি আমার কাছে ফেভারিট স্পোর্টস পারসোনালিটি। আপনি যেভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দৌড়াতে হয়… এটা অ্যামেজিং।’
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল তার সমাপণী বক্তব্যে দলকে মনে করিয়ে দেন, সামনে এখন একটাই লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়াতে হতে যাওয়া এশিয়ান কাপের কথা, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের নারী জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা দুটি কাজ করেছেন। আপনারা নতুন করে ইতিহাস লিখছেন এবং আমাদের সমাজের মন-মানসিকতা বদলানোর একটা যাত্রাতে আমাদের এগিয়ে নিচ্ছেন। আমরা ১৮ কোটি মানুষ, এটা একটা টিম ওয়ার্ক। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দল, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য। আপনারা এগিয়ে যান। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য-মিশন অস্ট্রেলিয়া।
এরপর গ্রুপ ছবি তুলে উচ্ছ্বাসের আবহে মঞ্চ ছাড়েন সবাই।