বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির পর দুই দিনে খাদ্য ও জরুরি ত্রাণবাহী ১ হাজার ৫৪৫ ট্রাক প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার মোট ৯ শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত রবিবার ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টার দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১ হাজার ৩০০ ট্রাক রাফাহ সীমান্তে প্রস্তুত আছে। এরপর ত্রাণবাহী আরও ৭০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। আমরা একা নই, অন্যরা এসব মানবিক সহায়তা প্রস্তুতে কাজ করছেন।
এর আগে মিশর জানিয়েছিল, প্রতিদিন ৫০০ ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকবে গাজায়। তীব্র খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে রবিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ৬৩০ ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানায় টাইমস অব ইসরায়েলের।
রবিবার সারাদিনে রাফা ও অন্য সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে মোট ৬৩০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। ট্রাকগুলোতে গাজার বাসিন্দাদের জন্য জ্বালানি, ময়দা, চিকিৎসা সামগ্রী, শাকসবজি, মাংস ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণ পাঠিয়েছে। এই ট্রাকগুলোর মধ্যে ২৫০টি উত্তর গাজায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ইউএনওসিএইচএ জানিয়েছে, গত সোমবার ৯ শতাধিক ট্রাক মানবিক সাহায্য নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, যুদ্ধবিরতি চলাকালে গাজায় দৈনিক ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের কথা আছে। তবে, আরও ৩০০ ট্রাক বেশি প্রবেশ করেছে এবার।
ইউএনওসিএইচএ এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবিক সাহায্য গাজা অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত এক অভিযানের অংশ, যাতে অঞ্চলটিতে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য সহায়তা বাড়ানো যায়।
সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সোমবার ৯১৫টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলি বাহিনীর ১৫ মাসের অভিযানে গাজার উত্তরাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে নজিরবিহীন এক হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন। এর পাশাপাশি ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে গাজায় নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা। সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
১৫ মাসের সেই ভয়াবহ অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪৭ হাজার বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ জন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১১ হাজার মানুষ। হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টায় বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে গাজায়।
রবিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১ টা থেকে শুরু হয়েছে এই বিরতি। বিরতির প্রথম দিন ৩ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, বিনিময়ে ৯০ জন কারাবন্দি ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েল।