শিরোনাম :
জরুরি বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা, ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ছাত্র-জনতা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না : মির্জা ফখরুল জাতীয় সনদ নাগরিকের সকল অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে : আলী রীয়াজ সিলেট সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চলে কারফিউ জারি, রাতের চলাচল নিষিদ্ধ রাশিয়ার ৮০তম বিজয় দিবস পালন : কুচকাওয়াজে পুতিনের পাশে সি   পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না জনগণ: তারেক রহমান ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি পাকিস্তানের ভারতে তথ্য সেন্সরশিপ: ইউটিউবে ৪ বাংলাদেশি চ্যানেল সহ ভারতীয় অনলাইন এবং এক্সে ৮ হাজার একাউন্ট বন্ধ

সরকার চাইলে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তুত চীন

  • আপলোড টাইম : ১০:৪৭ এএম, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৭ Time View
ছবি: ষংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
বাংলাদেশ সরকার চাইলে তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন। তিস্তা প্রকল্প দ্রুত শুরু করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন প্রস্তুত। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মঙ্গলবার ১৮ ফ্রেবুয়ারি ঢাকায় চীন দূতাবাসে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকার চাইলে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে প্রস্তুত চীন। তিস্তার নদীর তীরে বসবাসকারী হাজারো মানুষের কল্যাণে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। তবে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তা আপনাদের এলাকার নদী, আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ প্রকল্প দ্রুত শুরু করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা প্রকল্পের জন্য চীনের সহায়তা চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। প্রকল্পটি মূল্যায়ন করার পর ২০২৩ সালে চীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়ে জানায় যে, তাদের দেওয়া প্রকল্পে কিছু অপ্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় প্রকল্পটি সংশোধন করা উচিত। কিন্তু তারপর থেকে আমরা এখনো বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। এ নিয়ে মন্তব্য করবে না চীন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।

বাংলাদেশের দুটি পাঠ্যবই ও জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এশিয়ার মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে ভুলভাবে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইয়াও ওয়েন বলেন, বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন চাই। আশা করি এ বিষয়ে চীনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চায়। বাংলাদেশ এক চীন নীতি, বেল্ট অ্যান্ড রোডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এই জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ চীন।

চীনের কুনমিং প্রদেশের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগিদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূত বলেন, চিকিৎসার ধরণ, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক প্রস্তুতিতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চের শুরুতেই বাংলাদেশের রোগীদের প্রথম দলটি চিকিৎসা নিতে কুনমিং যাবে বলে আশা করছে বেইজিং।

গত মাসে পররাষ্ট্র উপদেস্টা মো. তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেন। তখন তিনি প্রথম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার ওই প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ লুফে নেয় চীন।

সংবাদ সম্মেলনে চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, ঢাকায় হাসপাতাল তৈরির জন্য বাংলাদেশের কাছে থেকে বিস্তারিত প্রস্তাবের অপেক্ষায় রয়েছে চীন।

এ ছাড়া চীন তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত আধুনিক সরঞ্জাম দেবে। ঢাকার একটি হাসপাতালে স্থাপিত ওই চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের জন্য রোবোট নিয়ন্ত্রিত ২০টি আধুনিক সরঞ্জাম আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় আসবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনিময়ে বাংলাদেশে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আর চীনে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

দুই দেশের ভবিষ্যত সহযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৫০ বছর ধরে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে।

চীন সবসময় বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাই থাকুক না কেন, পরস্পরিক সম্মান, সাম্য এবং স্বার্থকে সামনে রেখে এ দেশের সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বই চীনের নীতি।

দুই দেশের বন্ধুত্বের এ ভিত্তি কখনো পরিবর্তন হবে না আশা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্বভৌম এবং জাতীয় ঐক্য সুরক্ষায় চীন সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য চীনকে বেছে নিয়েছেন। এটা দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতার স্পষ্ট বার্তা। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বকে সুসংহত ও গভীর করার বাড়তি সুযোগ।

চীন ও বাংলাদেশ একে অপরকে সুপ্রতিবেশি ও বিশ্বস্থ অংশীদার ভাবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব-রাজনীতি কিংবা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির যে পরিবর্তনে এ সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না। বরং এটি সব সময়ে সামনের দিকে প্রবল গতিতে এগিয়ে যাবে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কৌশলী জবাব দেন। বলেন, প্রশ্নটি চীনকে নয়, ভারতের দূতের কাছে রাখতে হবে। তবে আশা করেন যে, কোনো ইস্যু দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

ঢাকা-দিল্লির উত্তেজনা কমাতে চীন মধ্যস্থতা করবে কি না—এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশিরা নিজেদের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট বিচক্ষণ।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াও ওয়েন জানান, সংস্কার ও নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। এ নিয়ে মন্তব্য করবে না চীন। এছাড়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এ দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও চীনের অবস্থান একই। চীন এই সমস্যার সমাধান চায়।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech