শিরোনাম :
ডেঙ্গুতে ১ দিনে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৩৬ জন পিআর একটি সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান : রিজভী শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার জন্যে সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ভাঙ্গা থানা ও উপজেলা পরিষদে হামলা-ভাঙচুর-আগুন জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা দেখাতে পুলিশের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রচেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে : বিএনপি মহাসচিব জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্পমালিকদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১২ যুব উদ্যোক্তা তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর: খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যারাজের সব জলকপাট- নিম্নাঞ্চল ডুবছে কাতারে ইসরায়েলি ‘বর্বর’ হামলার নিন্দা : দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইন্দোনেশিয়া: ৭ জন নিহত

  • আপলোড টাইম : ১০:৪৬ পিএম, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৯ Time View
ছবি: সংর্গহিত

।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইন্দোনেশিয়ায় সৃষ্ট দাঙ্গায় দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় গত কিছুদিনে অন্তত ৭ জন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।

শুক্রবার ৫ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ দেশ।

সরকার সংসদ সদস্যদের জন্য মাসিক আবাসন ভাতা বাড়ানোর এক সিদ্ধান্ত অনুমোদনের খবর প্রকাশের পর থেকেই জনরোষ বিস্ফোরিত হয়। এ ভাতা দেশের ন্যূনতম মজুরির ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি, যা দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাশালী রাজনীতিকদের ব্যবধান স্পষ্ট করে দিয়েছে।  

স্থানীয় গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি মাসে ইন্দোনেশিয়ার একজন এমপি ১০ কোটি রুপিয়ার বেশি (৬,১৫০ ডলার) পেয়ে থাকেন, যা ইন্দোনেশিয়ার গড় আয়ের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয় একটা বড় অংশ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

দেশটিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল আগে থেকেই। তবে অনেকে মনে করেন এই দফায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভাতা বাড়ানোর ঘোষনায়।

রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভের শুরুটা হয়েছিল ২৫শে অগাস্ট। কিন্তু সেই বিক্ষোভ সহিংস রুপ নেয় ২৮শে অগাস্ট রাতে।

পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ২১ বছর বয়সী একজন মোটরসাইকেল চালক পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যান, যিনি জাকার্তায় রাইড শেয়ারিং সেবা দিতেন। এই বিক্ষোভের আগুনে ঘিয়ের মতো কাজ করে মোটরসাইকেল চালক আফ্ফান কুর্নিয়াওয়ানের মৃত্যু।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাকার্তার সংসদ ভবনের কাছে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি দ্রুত সরে যাওয়ার সময় ২১ বছর বয়সী আফ্ফানের মোটর সাইকেলকে চাপা দেয়। সে সময় তিনি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন।

ওই মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এবং ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ প্রধান ক্ষমা চাইলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া থেকে থামাতে পারেননি। পশ্চিম জাভা থেকে শুরু করে বালি, লোম্বকের মতো দ্বীপ এলাকাতেও তীব্র বিক্ষোভ করছে মানুষ।  

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে সরকার নিজেই যখন মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করছে এবং মানুষ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সাথে লড়াই করছে, তখন ইন্দোনেশিয়ার ধনী, রাজনৈতিক অভিজাত গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা সেই ক্ষোভের প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমে আসে”, বলছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইভ ওয়ারবার্টন।

আফ্ফানের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট প্রাবোও তার পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং বিচারের আশ্বাসও দেন। কিন্তু তাতে বিক্ষোভের তীব্রতা কমেনি।

দেশব্যাপী বিক্ষোভ থামাতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার ঘোষণা দেন রবিবার। তবে ওই সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানালেও অনেক বিক্ষোভকারীই মনে করেন যে এটি যথেষ্ট নয়।

বিক্ষোভকারীরা শুধু অতিরিক্ত ভাতার বিরুদ্ধেই নয়; বরং সামগ্রিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অনেকের মতে, প্রতিবার নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর সাধারণ মানুষকে ভুলে যান। নারীবাদী কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারহরণের অভিযোগ তুলছেন।

এই বিক্ষোভের মূলে রয়েছে বহুদিনের বৈষম্য, দুঃশাসন আর জবাবদিহিতার অভাব। মানুষ বড় ধরনের সংস্কার আশা করে, বিশেষ করে কৃষি ও শিক্ষা খাতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে”, বলছিলেন অল ইন্দোনেশিয়ান স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক সমন্বয়ক হেরিয়ান্তো।

বিক্ষোভ দমনে সরকার রাজনীতিবিদদের দেওয়া সুবিধা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেয়। রাষ্ট্রীয় ভবনে আগুন দেওয়া ও রাজনীতিবিদদের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনার পর এসব নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট প্রাবোও।

মাকাসার শহরের স্থানীয় পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অন্তত তিনজন মারা যায়। তারা আগুন লাগিয়ে দেওয়া ওই ভবনের ভেতরে আটকা পড়েছিলেন।

অন্যদিকে জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় বেশ কয়েকজন এমপির বাসায় হামলা করে লুটপাট চালায়। ওই এমপিরা এর আগে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছিলেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

চলমান এই বিক্ষোভের কারণে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও তার চীন সফর বাতিল করেছেন।

অন্যদিকে টিকটকও ইন্দোনেশিয়ায় তাদের লাইভ স্ট্রিমিং সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। উসকানিমূলক কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে টিকটক।

অনেক বিক্ষোভকারীই মনে করেন যে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ‘মিশ্র নীতিতে’ বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে।

“একদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগও অব্যাহত আছে”, বলছিলেন হেরিয়ান্তো।

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দমনে লাইট বন্ধ করে রাখা এবং রাবার বুলেট চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এসব সিদ্ধান্তের কারণে পুলিশি নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্ষোভকারীরা।

এই পর্যায় থেকে বিক্ষোভ কতদূর গিয়ে দাঁড়াাবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে এটি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে প্রাবোওর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাবোওকে অনেক ইন্দোনেশিয়ান মনে রেখেছে সেনাশাসক সুহার্তোর জামাতা হিসেবে, যিনি দ্রুতই সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে আসীন হন।

সুহার্তোর শাসনের অবসানও ঘটেছিল ছাত্র বিক্ষোভের পর। তাই কীভাবে এই বিক্ষোভ সামাল দেবেন, সেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবে যথেষ্ট সাবধান থাকবেন প্রাবোও।

পুলিশ জাকার্তার বিভিন্ন জায়গায় চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছে, সেনাবাহিনী সারা শহরে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় স্নাইপারও দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন সাম্প্রতিক বিক্ষোভ বড় ধরনের আন্দোলনের শুরু।  
সূত্র: বিবিসি. আল জাজিরা।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech