।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আবারও ভেটো দিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে ষষ্ঠ বার গাজার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোটো দিল দেশটি।
শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ১৪ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র। খসড়া প্রস্তাবে গাজায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি তোলা হয়েছিল।
সর্বশেষ প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং ত্রাণ সরবরাহ করতে দেওয়ার কথাও বলা ছিল। এর বিপরীতে খসড়া প্রস্তাবটিতে গাজায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরাইলিদের অবিলম্বে সম্মানজনক মুক্তির শর্তও ছিল।
ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে হামাস একে ‘গণহত্যার অপরাধের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে জড়িত থাকা’ বলে চিহ্নিত করেছে।
গাজা সিটিতে কয়েক দিন ধরে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এরই অংশ হিসেবে এ শহরে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালাচ্ছে দেশটি। হামলার মুখে গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনিরা দলে দলে হেঁটে আরও দক্ষিণ দিকে সরে যাচ্ছেন। অনেকে যানবাহন ও গাধায় টানা গাড়িতে গাজা সিটি ছাড়ছেন।
গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রায় ২ বছর হতে চলেছে। এ সময়ের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের শর্ত যুক্ত করে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত ছয়টি প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইসরায়েলি সেনারা দুই দিক থেকে অগ্রসর হয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের গাজা নগরীর কেন্দ্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। টানা বোমা হামলায় আতঙ্কে হাজারো মানুষ পশ্চিমের উপকূলীয় সড়কের দিকে ছুটছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, নগরীর শেষ জীবনরেখাও ভেঙে পড়ছে। এছাড়া জাতিসংঘে ফের যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সেনারা দুই দিক থেকে অগ্রসর হয়ে গাজা নগরীর কেন্দ্রের দিকে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে স্থানীয়দের যেন এক প্রকার “স্যান্ডউইচ”-এর মতো মাঝখানে আটকা ফেলে উপকূলের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এর উদ্দেশ্য, তাদের নগরীর সবচেয়ে বড় এই জনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, সেনারা উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হয়ে মানুষকে পশ্চিম দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এদিকেই আল-রাশিদ উপকূলীয় সড়ক দক্ষিণে চলে গেছে।
তিনি বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ আক্ষরিক অর্থেই জীবন বাঁচাতে ছুটছে। আমরা এখন ঢেউয়ের মতো মানুষের স্রোত দেখতে পাচ্ছি।
গাজা নগরীর বাসিন্দারা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হামলা থামছে না। ড্রোন ও যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষণের পাশাপাশি সেনারা দূরনিয়ন্ত্রিত “রোবট” ব্যবহার করছে। এগুলো বিস্ফোরকভর্তি মানববিহীন যান এবং এই অস্ত্র দিয়ে পুরো মহল্লা ধ্বংস করা হচ্ছে।
শুধু বৃহস্পতিবারই গাজা নগরীতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে পালানো পরিবারগুলোকে আবারও বাস্তুচ্যুত হওয়ার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে কোনো “নিরাপদ অঞ্চল” নেই। এবার শঙ্কা, হয়তো আর কখনো ঘরে ফেরাও সম্ভব হবে না।
তবুও অনেকেই রয়ে গেছেন। ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ — মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ — আটকা রয়েছেন। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, নিরবচ্ছিন্ন হামলা ও মৌলিক সেবার পতনের কারণে এই সংখ্যা দ্রুত কমতে পারে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর (ওসিএইচএ) বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছে, গাজা নগরীর শেষ লাইফলাইনও ভেঙে পড়ছে।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে অভিযোগ করেছে, গাজায় বিমান হামলায় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করার আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতাকে ইসরায়েল স্পষ্টতই অবহেলা করছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। প্রস্তাবটিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছিল।