।।বিকে রিপোর্ট।।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আবারও তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম ভারতীয় দূতকে তলব করেন।
মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে যান। দেশটির ডেপুটি হাইকমিশনার পাওয়ান বান্ধেও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দিল্লি, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশি মিশন এবং কূটনীতিকের নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে গত ১০ দিনে প্রণয় ভার্মাকে দ্বিতীয়বার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন ঘটনায় এ নিয়ে অন্তত ছয়বার তলব করা হলো প্রতিবেশী দেশটির রাষ্ট্রদূতকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসে ঘটা এসব ঘটনা ‘পূর্বপরিকল্পিত’ এবং সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ধরনের ঘটনা কেবল কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, শান্তি ও সহনশীলতার মূল্যবোধের পরিপন্থি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সময় বাংলাদেশ সরকার ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ও আবাসস্থলের বাইরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনাকেও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ।
ঘটনাগুলোর পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক দায়বদ্ধতা অনুযায়ী কূটনৈতিক কর্মী এবং স্থাপনাগুলোর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় ভারত সরকার অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছে ঢাকা।
প্রসংগত, এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সেদিন ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্যে সরকারের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে দেশটির সহযোগিতা কামনা করা হয়।
সেদিন ভারতীয় দূতকে তলবের পরে এক প্রেস নোটে দিল্লি দাবি করে, দেশটির ভূখণ্ড কখনো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়নি।
প্রেস নোটে আরও বলা হয়েছিল, আমরা সবসময় বলে আসছি যে, বাংলাদেশে মুক্ত, ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হওয়া উচিত। এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
পরে অবশ্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নির্বাচন নিয়ে ভারতকে নসিয়ত না করার পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পাল্টা জবাবে ১৭ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।