।।বিকে ডেস্ক।।
হিন্দুত্ববাদীরা আবারও কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন অফিসের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর হিন্দু সংহতি আয়োজিত এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে। তবেেআজ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে কোনরকম সংঘাতে লিপ্ত হয়নি।
বিক্ষোভকারীরা সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী স্লোগান দেয়। এদিন বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেও সাধু সন্তুরা সমাবেশে যোগ দেন। ঘোষণা করা হয়,এই হিন্দু নির্যাতন বন্ধ না হলে এর বিরুদ্ধে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
স্মারকলিপিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দীপু দাস হত্যায় অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
পরে শুভেন্দু অধিকারী উপ-হাইকমিশন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানান, তারা স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বরদাশত করা হবেনা। হিন্দু বিদ্বেষ বন্ধ করতে হবে। হিন্দু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
অন্য দিকে শুক্রবার হুগলির আরামবাগেও হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয় বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে। প্রতিবাদকারীরা দীপু দাস হত্যার বিচার দাবি করে অবিলম্বে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধের দাবি তোলেন।
এদিকে রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এই ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক হামলা নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে রাজবাড়িতে গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।
পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
প্রসংগত উল্লেখ্য গতকাল বৃহস্পতিবার খোদ ভারতে বড়দিনে খ্রিষ্টানদের ওপর ৬০টির বেশি হামলা করার খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের ক্যাথলিক বিশপ’স কনফারেন্স বলেছে, বড়দিনের মৌসুমে খ্রিষ্টানদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব ঘটনায় ‘কোনো যদি-কিন্তু না রেখেই নিন্দা জানাচ্ছে’ তারা।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বড়দিন ও এর আগে উদযাপনের প্রস্তুতির সময়ে যিশুখ্রিষ্টের জন্ম উদযাপন করতে গাওয়া আনন্দের গান ‘ক্রিস্টমাস ক্যারল’-এর গায়ক-গায়িকাদের ওপর, চার্চে ধর্মীয় সভায় কিংবা বড়দিনের অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছে ও হেনস্তা করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন চার্চে ভাঙচুর, বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করে দেওয়া এবং বড়দিনের উৎসব পালন করতে থাকা মানুষকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার ঘটনার প্রতিবেদনও তুলে এনেছে। নির্যাতিত খ্রিষ্টানদের পাশে থাকার লক্ষ্যে সৃষ্ট অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন ডোরস’-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুধু বড়দিনের সময়েই ভারতজুড়ে খ্রিষ্টানদের ওপর ৬০টির বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা তৈরি করেছে যেগুলো, তার মধ্যে একটি মধ্য প্রদেশের জাবালপুরের, যেখানে বড়দিনের উৎসবে যোগ দেওয়া এক দৃষ্টিশক্তিহীন খ্রিষ্টান নারীকে হেনস্তা ও মারধর করতে দেখা যায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় নেত্রী আঞ্জু ভারঘাভাকে। ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিরোধী দল কংগ্রেস এটিকে বলছে ‘বর্বরতা ও নির্মমতার উদাহরণ’। চারদিকে সমালোচনার পর স্থানীয় বিজেপি ভারঘাভাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ভারঘাভা অবশ্য কোনো ভুল করেননি দাবি করেছেন। পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ। সূত্র-মানব জমিন