।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বন্ধে আগাম হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর রাজধানী দামেস্কে সিরীয় সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
বুধবার ১৬ জুলাই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনা সদরদপ্তরে হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল।
গত সপ্তাহে সিরিয়ার সুয়েদা শহরে দ্রুজ সম্প্রদায় ও বেদুঈন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে সেখানে প্রবেশ করে সিরীয় বাহিনী। এরপরই তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। আর বুধবার তারা সরাসরি সিরিয়ার সেনা সদরদপ্তরে বিশাল হামলা চালিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল সারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নেওয়ার পর এ মুহূর্তে ইসরায়েল সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি হামলা চালাচ্ছে। আর এ হামলার মাধ্যমে সারা এবং সিরিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, সুইদা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
সিরিয়ার সুইদা থেকে এএফপি জানায়, মঙ্গলবার সিরীয় সরকারদলীয় বাহিনী শান্তিচুক্তি পর্যবেক্ষণের কথা বলে সুইদা শহরে প্রবেশ করলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা স্থানীয় বেদুইন যোদ্ধাদের সঙ্গে একত্র হয়ে দ্রুজ যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়।
সাম্প্রতিক এই সংঘাত সিরিয়ায় এপ্রিল-মে মাসে দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারের সংঘর্ষের পর সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ওই সময়ও রাজধানী দামেস্ক ও সুইদা প্রদেশে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।
২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ পরিচালনায় আসে ইসলামপন্থী নতুন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শুরু থেকেই উত্তপ্ত।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেন, আমরা আগেই বলেছি, সুইদার দ্রুজ সম্প্রদায়কে ইসরাইল একা ফেলে রাখবে না। আমরা আমাদের নিরস্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করবো এবং সিরীয় বাহিনী যদি পিছু না হটে, তবে আমাদের প্রতিক্রিয়া আরও জোরালো হবে।
এরপরই ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা দামেস্কে সিরীয় সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের প্রবেশপথে হামলা চালিয়েছে।
সুইদার ভেতরে বুধবারও গোলাগুলি চলেছে। এএফপির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। নিহতদের মধ্যে কেউ বেসামরিক, কেউ সামরিক পোশাকে ছিলেন।
‘সুইদা ২৪’ নামক একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, শহরের পশ্চিমাঞ্চলে মর্টার ও ভারী গোলাবর্ষণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘আইনের বাইরে থাকা কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী’ সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং সরকার বাহিনী এখনও ‘অস্ত্রধারীদের জবাব দিচ্ছে’।
মানবাধিকার বিষয়ক সিরীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯২ জন দ্রুজ, যাদের মধ্যে ২১ জনকে ‘সরকারি বাহিনীর হাতে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে’। বাকি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৩৮ জন সরকারি নিরাপত্তা সদস্য ও ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা।
সাম্প্রদায়িক এ সহিংসতা শুরু হয় একটি দ্রুজ সবজি বিক্রেতাকে অপহরণের মধ্য দিয়ে, যা পাল্টা অপহরণ ও হামলায় রূপ নেয়।
ইসরাইল বলছে, তারা দ্রুজ সম্প্রদায়ের পক্ষে দাঁড়ালেও অনেকে মনে করেন, এটি আসলে সীমান্ত এলাকা থেকে ইসলামপন্থী সিরীয় বাহিনীকে দূরে রাখার কৌশল মাত্র।
প্রসংগত, গত বছরের ডিসেম্বরে যখন বাশার আল-আসাদের পতন হয় তখন টানা ৪৮ ঘণ্টা সিরিয়ায় বিমার হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময়ে ৪০০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সিরিয়াকে সামরিকভাবে দুর্বল করে দেয় দখলদাররা।
সিরিয়ার নতুন সরকার স্পষ্ট করেছে তারা কোনো ধরনের যুদ্ধ করতে চায় না। অবশ্য তাদের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করার সক্ষমতাও নেই।
ইসরায়েলের নতুন এসব হামলা সারাকে শুধু দুর্বলই দেখাচ্ছে না, এতে করে সিরিয়ার সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সূত্র: বিবিসি