।।বিকে ডেস্ক।।
।।মো:মাহবুবুল বাসেত।।
১৯৭১-আমি তখন চট্টগ্রাম সরকারী সুসলিম হাই স্কুলের ছাত্র। বাবাও একই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। পড়ি ডে শিফটে। বাসা শহরের জামাল খান ওয়ার্ডের আসরকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অফিসার্স লেইনে-থাকি সরকারী বাসায়। স্কুলে যাতায়াত করি প্রায় সময় পায়ে হেটে।
মুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
একদিন এক বন্ধু সহ স্কুল থেকে পায়ে হেটে বাসায় ফিরছিলাম। সিনেমা প্যালেস-এর পাশ দিয়ে।
একটু সামনে গেলেই মুসলিম ইনস্টিটিউট হল- চট্টগ্রামে সভা সমাবেশ এখানেই হত তখন।
হঠাত কানে মাইকের আওয়াজ আসলো-”আজকের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করবেনপুর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। বিশেষ অতিথি মেজর জেনারের ওমরাও খান।
এই নামটি শুনার পর আমার বন্ধুটি বললো-চলতো দেখি ওখানে কি হচ্ছে। দুজনই আগ বাড়িয়ে হলের সামনের খোলা দরজা দিয়ে দেখি জামায়াতের সমাবেশ।
আমরা তখন হলের মুল দরজার বাহিরে বারান্দায় দুটি ব্লাকবোর্ড দেখলাম। একটির ওপর পুর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ বা মানচিত্র এবং আরেকটি ব্লাকবোর্ডে পশ্চিম পাকিস্তানের মানচিত্র লাগানো এবং দুই ব্লাকবোর্ডের মাঝখানে আরবিতে কলেমা লেখা একটি মোটা আর্ট পেপার বামে ও ডানে দুই ব্লাকবোর্ডের সাথে যুক্ত করা।
আমার বন্ধুটা তখন হল থেকে বেরিয়ে আসা জামায়াতের এক লোককে জিঙ্গেস করলো-”দুই ব্লাক বোর্ডের মাঝখানে কলেমা লাগানো কেন?
লোকটি জানালো-”মুক্তিযুদ্ধ দুই পাকিস্তানের মধ্যকার কলেমার বন্ধন কোনদিন ছিন্ন করতে পাররবেনা”।
এমন সময় এক দাড়িওয়ালা যুবক হলে ঢুকার সময আমার বন্ধুর পিঠে হাত চাপড়িয়ে বললেন-আমি মীর কাশেম আলী।
তোমরা কি মুসলিম হাই স্কুলের ছাত্র (পোষাক দেখে)?
ভেতরে গিযে বস- বলে তিনি ভেতরে ঢুকে গেলেন এবং আমরা বাসার দিকে চলে আসলাম।
৫৩ বছর পরে সে স্মৃতি মনে পড়লো। প্রমান হয়ে গেল-ধর্মের বন্ধনের চেয়েও ভাষার বন্ধন অনেক/অনেক এবং অনেকগুন শক্তিশালী। যার প্রমান আমার স্বাধীনতা,ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা ও নতুন জাতিস্বত্তা এবং নতুন রাস্ট্র বাংলাদেশ।।
চিৎকার দিয়ে বলছি-আমি বাঙ্গালী। শান্তি পাই আমি এই পরিচয়ে। আমার জাতিস্বত্তার সুচনা হয়েছিল-পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া স্বত্তেও কায়েদে আজম ঢাকায় এসে রাস্ট্র ভাষা উর্দৃৃকে পাকিস্তানের রাস্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষনা করেছিলেন যে দিন। যার কারনে ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের পরিবর্তে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের আলোকে নতুন জাতিসত্বর পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রের জন্মলাভ।
এই বাস্তবতাকে যারা অস্বীকর করতে চায় তারা আর যাই হোক বা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন বা যে লেবাসই ধারন করুক না কেন – তারা ভাল মানুষ হতে পারেনা।
প্রসঙ্গ;জাতীয়তাবাদ:
পৃথিবীতে এখন মুলত দুই ধরনের জাতীয়তাবাদ দেখা যায়।
(ক)ভাষা ও অন্চল ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ-
আরব দেশগুলো এবং বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশসমুহ
(খ) ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ-
পাকিস্তান ,ইরান ও আফগানিস্তান সহ গুটিকয়েক রাস্ট্র।
মন্তব্য:
ধর্ম ভিত্তিক রাস্ট্র ও শরিযা আইনের কনসেপ্ট থেকে অধিকাংশ দেশ ঘোষনা দিয়ে সরে এসেছে-দুই/চারটি ছাড়া।তারাও আস্তে আস্তে শিথিল করে সরে আসার চেস্টা অব্যাহত রেখেছে।
(ক)https://www.youtube.com/watch?v=d0fx-0sh-oA
(খ)https://www.youtube.com/watch?v=KIXFr-FqeQ0