।।বিকে রিপোর্ট।।
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়া এবং এসব অঞ্চল ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রবিবার ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেজার গভর্নিং বডির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় পাঁচ বছর পর বেজার গভর্নিং বডির এই বৈঠক হল।
বাতিল হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি এবং পাঁচটি বেসরকারি।
সরকারি অঞ্চলগুলো হচ্ছে- কক্সবাজারের সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, বাগেরহাটের সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরের শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হচ্ছে-মুন্সিগঞ্জে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর গার্মেন্টস শিল্প পার্ক, সুনামগঞ্জে নিটল-নিলয় গ্রুপের ছাতক ইকোনমিক জোন, বাগেরহাটের ফমকম ইকোনমিক জোন, ঢাকায় সিটি গ্রুপের সিটি ইকোনমিক জোন ও নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ে ইউনিক গ্রুপের সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নেওয়া হয়। এ কাজে যুক্ত বেজা।
গত বছর ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার এ মিশন থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানায়। ৭ জানুয়ারি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক জানান সরকার ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে কেবল পাঁচটি অঞ্চল নিয়ে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রয়োজন নেই। বাস্তবতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলোকেই ফলপ্রসূ করতে হবে। বর্তমানে দেশে ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি ইকোনমিক জোনে কাজ চলছে। ৭২০০ একর জমিতে নির্মাণ ও উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে ১২২টি কোম্পানি। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান এবং ২১২টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব জোনে বিনিয়োগ করেছে।
বর্তমান বাস্তবতায় এখনই ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ‘প্রয়োজন নেই’ মন্তব্য করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেছেন, আগামী দশ বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা গেলেই সেটি ‘যথেষ্ট’ হবে বলে তিনি মনে করেন।
চৌধুরী আশিক জানান, বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে এখনো অনেক কিছু ম্যানুয়ালি চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে যেসব সেবা ডিজিটালে আছে, সেগুলোতে ম্যানুয়াল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, একজন বিনিয়োগকারীকে একটা নির্দিষ্ট পোর্টালে যেতে হবে। অন্য যেসব সেবা থাকবে সেটা ব্যাকএন্ডে সরকার ম্যানেজ করবে। সেজন্য একটা সফটওয়ার ডেভেলপ করতে হবে। কারণ এতগুলো প্ল্যাটফর্ম বিনিয়োগকারীর জন্য পেইনফুল। এজন্য নতুন সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হবে।
বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে (FDI) প্রবাসীদের মধ্যস্থতাকে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। “যেমন রেমিট্যান্সে ২.৫% প্রণোদনা দিই, তেমনি বিনিয়োগ আনলে সেক্ষেত্রেও প্রণোদনার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।”
বেজা ও বিডার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক অনেক দিন ধরে হচ্ছিল না তুলে ধরে চৌধুরী আশিক বলেন, ২০২০ সালে বেজা ও বিডার গভর্নিং বোর্ডের মিটিং হয়েছিল। পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) অথরিটির গভর্নিং বডির মিটিং হয়েছিল ২০১৯ সালে। বেপজার মিটিং হয়েছিল ২০১৮ সালে। প্রতিটি মিটিং ৫/৬ বছর পরে হচ্ছে। এটা ঠিক না। কম পক্ষে তিন মাস পর পর গভর্নিং বডির মিটিং হওয়া উচিত। আগামী মাসেও গভর্নিং বডির মিটিং হবে।
বৈঠকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে চৌধুরী আশিক বলেন, ‘আমরা বে টার্মিনাল নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা বলছি সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে। সেপ্টেম্বর অক্টোবরের মধ্যে বে টার্মিনালের ইস্যুটা রিজলভ করে একটা সিগনিফিকেন্ট মাইলস্টোন ক্রস করব। বে টার্মিনাল একটা পর্যায়ে নিয়ে আসবো। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে একটা ফ্রি ট্রেড জোন করব।
বোর্ড সভায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরকে আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে বে টার্মিনাল উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে একটি ফ্রি ট্রেড জোন প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। এ বিষয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছি। এতে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর পথ খুলবে। বিমানবন্দরগুলো আরও কার্যকর করে তুলতে হবে, যাতে বিদেশে পণ্য পাঠাতে খরচ কমে আসে।