।।বিকে রিপোর্ট।।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন এনবিআর সদস্য (কাস্টমস্ নীতি) আলমগীর হোসেন, হোসেন আহমদ (শুল্ক নীতি) ও আবদুর রউফ (মূসক নীতি) এবং বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মো. শব্বির আহমেদ।
বুধবার ২ জুলাই বিকেলে পৃথক চারটি আদেশ জারি করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
প্রজ্ঞাপনে সরকার ‘জনস্বার্থে’ তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মনে করায় অবসর দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তুলে ধরা হয়। চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, বিধি অনুসারে তারা অবসরজনিত সুবিধাদি পাবেন। যদিও সংশ্লিষ্টদের অনুমান, কয়েকদিন আগে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, এর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদেরকে এই অবসর প্রদান করা হতে পারে।
এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করায় তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
মো. জাকির হোসেনের সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, দপ্তর খোলা রাখার নির্দেশনা অমান্য করে গত ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রামের কাস্টম হাউজ বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি করায় মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা অনুসারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
একইসঙ্গে চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার হিসেবে বুধবার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, অন্তবর্তী সরকার সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর বিলুপ্ত করে মে মাসে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারির পর শুরু হওয়া আন্দোলনের শেষ দিকে সংস্থার সব সদস্যও যোগ দেন।
তখন অবসরে পাঠানো আয়কর বিভাগের সদস্য আলমগীর হোসেন এবং কাস্টমসের দুই সদস্য হোসেন আহমদ ও আব্দুর রউফও যুক্ত হয়েছিলেন। অপরদিকে কমিশনার শব্বিরকে আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরি করতে দেখা যায়। এনবিআরে সংস্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে কীভাবে রাজস্ব আদায়ের কাজ চলে তা নিয়ে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করতে দেখা যায়।
প্রথম দফায় মে মাসে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব ও নীতি বিভাগ আলাদা করার অধ্যাদেশের সময় আন্দোলনে নামেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। তখন সরকার এ থেকে পিছু হটে অধ্যাদেশ স্থগিত রেখে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সংস্কার কাজ চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর এনবিআরের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের টানা এক সপ্তাহের কর্মসূচির মধ্যে শনিবার থেকে দেশের কাস্টম ও ভ্যাটের দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আসে।
এ কর্মসূচি চলতে থাকলে দ্বিতীয় দিন রবিবার নড়েচড়ে বসে সরকার। এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে আন্দোলনরতদের কাজে যোগ দিতে কঠোর হুঁশিয়ারি আসে।
এরমধ্যেই আন্দোলনরত ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় দুদক।
আগের সূচি অনুযায়ী সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাতে বসতে চাননি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমপ্লিট শাটডাউন চালু রাখা অবস্থায় তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা জানান।
এরমধ্যে সংকটের সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।
দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পরে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
ওই দিন রাত থেকেই কাস্টম হাউজ খুলে দেওয়া হয়; সোমবার থেকে কাজেও ফেরেন সকলে। তবে বদলি, মামলা ও বরখাস্তের আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে।
এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন এনবিআরের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাদের মধ্যে এনবিআরের দুজন সদস্য আছেন। এ ছাড়া এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারও আছেন।