।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলির ঘটনার জেরে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে স্থায়ীভাবে অভিবাসী নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার ২৮ নভেম্বর সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে এক পোস্টে এই ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার গুলিবিদ্ধ হওয়া ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের একজন মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ২০ বছর বয়সী সারা বেকস্ট্রম তার আঘাত সইতে না পেরে মারা গেছেন। দ্বিতীয় ন্যাশনাল গার্ড সদস্য, ২৪ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু ওলফ। তিনি হাসপাতালে জীবনের জন্য লড়াই করছেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
সেনাদের ওপর গুলির ঘটনার পর পুরো অভিবাসন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি এমন ঘোষণা দিয়েছেন। যা পুরো বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগ্রহণ, চাকরি ও উন্নত জীবনের খোঁজে পাড়ি জমান।
ট্রুথে ট্রাম্প লিখেছেন, প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়েছি ঠিকই। কিন্তু ভুল অভিবাসন নীতির কারণে এসব অর্জন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে অনেক মানুষের জীবনব্যবস্থা কঠিন হচ্ছে।
আমি ঠিক করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের পুরো ব্যবস্থাকে আবার ঠিক হওয়ার সুযোগ দিতে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসী আসা পুরোপুরি বন্ধ করে দেব। এছাড়া জো বাইডেনের আমলে অবৈধভাবে ঢোকা লক্ষ লক্ষ মানুষের থাকার অনুমতি বাতিল করে দেব। ঘুমন্ত বাইডেন এসব লোককে অবৈধভাবে এনেছেন।
যারা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কাজে আসে না, বা যারা আমাদের দেশকে মন থেকে ভালোবাসতে পারে না, তাদের সবাইকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। দেশের বিদেশি নাগরিকদের সমস্ত সরকারি সুবিধা ও আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা হবে। যেসব বিদেশি আমাদের দেশের শান্তি নষ্ট করবে, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে।
যেকোনো বিদেশি, তিনি যদি দেশের বোঝা হন, নিরাপত্তার জন্য বিপদের কারণ হন, বা যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে না পারেন, তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
এই সবের মূল লক্ষ্য হলো—অবৈধভাবে আসা ও সমস্যা সৃষ্টিকারী মানুষের সংখ্যা অনেক কমানো। বিশেষ সুবিধায় যারা বেআইনিভাবে ঢুকেছে, তারাও এর মধ্যে পড়বে।
প্রসংগত, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার একটু পর ডাউনটাউনের ফারাগাট স্কোয়ারের কাছে দু’জনকে গুলি করা হয়। ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি করেন এক আফগান নাগরিক।
পুলিশ বলেছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে সন্দেহভাজন এক হামলাকারী এক ন্যাশনাল গার্ডকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়েন। সংঘর্ষের সময় সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীও গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন।
পুলিশের নির্বাহী সহকারী প্রধান জেফরি ক্যারল সাংবাদিকদের বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, হামলাকারী একজনই ছিলেন। তিনি অস্ত্র হাতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের ওপর আকস্মিক হামলা চালিয়েছেন।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ন্যাশনাল গার্ডের তিন সদস্যের কাছে এগিয়ে যান। তিনি গুলি ছোড়া শুরু করার আগপর্যন্ত খুব সম্ভবত রক্ষীরা তাঁকে খেয়ালই করেননি। হামলাকারী প্রথমে এক ন্যাশনাল গার্ডকে গুলি করেন, তারপর আরেকজনকে।
এরপর হামলাকারীকে প্রথমবার গুলি ছোড়া ন্যাশনাল গার্ডের ওপর আরেক দফা গুলি চালানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে তৃতীয় গার্ড হামলাকারীর দিকে পাল্টা গুলি চালান।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ আফগানিস্তান থেকে আসা ২৯ বছর বয়সী রহমানউল্লাহ লাকানওয়ালকে গ্রেফতার করেছে। তিনি আফগানিস্তানে থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও সিআইএর সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০২১ সালে যখন তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।