চবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: আহত অন্তত ৬০ সব পরীক্ষা স্থগিত

  • আপলোড টাইম : ১১:৩৬ এএম, রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৮৭ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে অন্তত ২১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

রবিবার ৩১ আগস্ট সকাল থেকে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাতভর সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকে পরীক্ষার্থী ছিলেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী ২ নম্বর গেটের মাছ বাজার সংলগ্ন

শাহাবুদ্দিনের বাসায় ভাড়া থাকেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে মারধর করেন।

এ ঘটনায় ওই ছাত্রী তার এক সহপাঠীকে ফোনে বিষয়টি জানান। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গিয়ে দারোয়ানকে ধরতে চাইলে স্থানীয়দের সঙ্গে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়রা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এরপর স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পাল্টা জড়ো হয়ে সংঘর্ষে নামেন।

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৬০ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবিব, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশ্রাফ রাতুল, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিব, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান জুবায়ের হিমেল, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিন মুস্তফা, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আল-মাসনুন, ইসলামিক স্টাডিজের আশিক মিয়া, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রিদুয়ান ব্যাংকিং, অ্যাকাউন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত ও রিপন, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইয়েন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আমরা রাত ১২টার দিকেই আমাদের একাধিক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তাদের এক জায়গায় এনে দিকনির্দেশনা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সময়মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল না।

সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। রাত ৩টা ২০ মিনিটে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ভোর থেকে পুরো চবি ক্যাম্পাসে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন, আর স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।  

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech