।।বিকে রিপোর্ট।।
ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালায় মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। উল্লেখ্য প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগে ৫০০ কোটি টাকা।
রবিবার ২৪ আগস্ট প্রকাশিত কেন্দ্রীয় এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত সার্কুলার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কাছে পাঠিয়েছে।
নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিগগির এজন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাংক সংক্রান্ত নীতিমালাতেও আরও সংশোধনের কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন, “ডিজিটাল ব্যাংকিং গাইডলাইনের সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা মূলধন থাকতে হয়। ২০২৩ সালের জুনে দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল ব্যাংক দেশের ব্যাংকিংখাতে একটি নতুন কনসেপ্ট। এর আগে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইনে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। সে তুলনায়, একটি প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। তবে এর অধীনে পরিচালিত পেমেন্ট সার্ভিস চলবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনস, ২০১৪ অনুসারে।
ডিজিটাল ব্যাংককে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। আইপিও’র আকার ন্যূনতম স্পন্সর বা উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং বৃহত্তর অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থারই একটি অংশ, যেখানে সব সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে মূল পার্থক্য হল প্রচলিত ব্যাংকের মতো শাখা বা অফিস থাকবে না শুধু একটি প্রধান কার্যালয় থেকেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনা, সুশাসন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত যে বিধি-বিধান রয়েছে, সেগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও বহাল থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে, যখন বিশ্বের অনেক নতুন প্রজন্মের ব্যাংক প্রচলিত শাখাভিত্তিক ব্যাংকিং ছেড়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করেছে।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদন আহ্বান করলে ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাঠানো হয়। প্রথম ধাপে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হল নগদ, এসিআই এর ‘কড়ি’, কয়েকটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ ডিজি টেন, ব্র্যাকের উদ্যোগ বিকাশ ও ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোগ ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড।
পরে ২০২৩ সালের আগস্টে নগদ ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির নামে এলওআই দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘পাচারের টাকায়’ বিদেশে কোম্পানি খুলে এই দুটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অভিযোগ সামনে আসে। যার কারণে নগদ ব্যাংক পিএলসির লাইসেন্স স্থগিত করা হয় এবং ‘কড়ি ডিজিটালকে’ এখনও লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।