শিরোনাম :
আসন পুনর্নির্ধারনের দাবীতে ফরিদপুরে মহাসড়ক অবরোধ: ঢাকার সঙ্গে ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জুলাই আন্দোলনের যুবা ও জেন্ডার ডাইভার্সদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বোধন মাজারে হামলা ও মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় মসজিদের ইমামসহ ১৮ জন গ্রেফতার ‘ডাকসুর মধ‍্য দিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠলো বাংলাদেশ’ ইসরায়েল গাজায় একের পর এক যুদ্ধাপরাধ করছে’— জাতিসংঘ, নিহত আরও ৫২ গার্মেন্টস খাতে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার চীনের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু : উৎসবমুখর পরিবেশ-ভোটারদের লম্বা লাইন দুপুরের মধ্যে হালকা বৃষ্টি হতে পারে শেখ হাসিনার পতন আর স্বাধীনতার পতন এক কথা নয় : কাদের সিদ্দিকী ডাকসু নির্বাচন : ঢাবিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে ডিএমপি – বন্ধ থাকছে ঢাবি মেট্রো স্টেশন

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৯, কারফিউ জারি

  • আপলোড টাইম : ০৯:৪২ পিএম, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৬ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামা জেন-জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।

সোমবার ৮ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু ভ্যালি পুলিশ কার্যালয়ের মুখপাত্র শেখর খানালের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় সমাবেশ চলাকালীন কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হন। পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতেও দুজন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে কাঠমান্ডু পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলছে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার লক্ষ্যে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছেন। এছাড়া দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথরও নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

‘জেন জি’ পরিচিত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশের সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর আওতা বাড়িয়েছে।

শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ কেবল রাজধানীর বানেশ্বর এলাকায় কারফিউ দিয়েছিল। সহিংসতার পর নতুন করে প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, মহারাজগঞ্জের লাইনচুরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিঙ্গা দুর্বার এলাকার সব অংশ, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সংলগ্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে।

স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে, বলেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায় নেপাল সরকার গত শুক্রবার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেয়ার পর ফেসবুক, এক্স, ইউটিউবসহ ওই সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলোতে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশীয় দেশটির লাখ লাখ ব্যবহারকারী ক্রুদ্ধ ও হতাশ হয়, বলছে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা। অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়াকে কারণ দেখিয়ে জুলাইয়ে নেপালের সরকার ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামও বন্ধ করে দিয়েছিল।

সোমবার কাঠমান্ডুতে তরুণদের কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে; পরে তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের টনক নড়িয়েছে, যদিও এখানে একত্রিত হওয়ার এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছি, কেননা দুর্নীতি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক তরুণ ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে। সেই গুলি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের হাতে বিদ্ধ হয়েছে।

কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের কর্মকর্তা শেখর খানাল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেককে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা কারফিউর বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্টের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ার পর নেপালের রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

বানেশ্বরে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কান্তিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠাও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শহর দামাকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

কাঠমান্ডুতে সহিংসতার পর নেপালের বিভিন্ন অংশেও বিক্ষোভের খবর মিলছে। পোখারায় বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর করার পর সেখানেও কারফিউ জারি হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।

হতাহত প্রসঙ্গে কাঠমান্ডুর তিনটি হাসপাতালে এখনও একশ জনেরও বেশি আহত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরও ৪৫ জন চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। সেখানকার জাতীয় ট্রমা সেন্টারে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালটির প্রধান সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. বদরি রিজাল জানান, চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিউ বানেশ্বরের কাছে সিভিল সার্ভিস হাসপাতালে কিছু মরদেহ রাখা হয়েছে, যেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক দীপক পাউডেল বলেন, হাসপাতালে আনা বেশিরভাগ আহতের শরীরে গুলি লেগেছে।

বেশ কিছু মরদেহ নতুন বানেশ্বরের এভারেস্ট হাসপাতালেও রাখা হয়েছে। হাসপাতাল প্রশাসনের সহকারী প্রধান অনিল অধিকারী বলেন, বিপুল সংখ্যক আহত ব্যক্তিকে আনার পর তাদের অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

একইভাবে, সিনামঙ্গলের কেএমসি টিচিং হাসপাতালে একজন আহত ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক প্রধান নারায়ণ দাহাল।

ক্রমেই আহতদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সিভিল হাসপাতাল আহতদের কয়েকজনকে অন্যান্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, আহতদের বেশিরভাগকে সিভিল সার্ভিস (সিভিল) হাসপাতাল এবং বীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহত বেশ কয়েকজনকে সিনামঙ্গলের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech