।।বিকে রিপোর্ট।।
পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যমুনা অভিমুখে অগ্রসর হওয়া জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দলের পদযাত্রা পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর দুপুর ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে সেখান ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় আন্দোলনকারীরা নভেম্বরে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পদযাত্রায় অংশ নেওয়া জামায়াত নেতাকর্মীরা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করছিলেন। হঠাৎ পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছে। মৎস্য ভবন থেকে তাদের সামনের দিকে এগোতে দেওয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ইসলামি দলগুলোর ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিতে যমুনায় গেছেন। দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানিয়ে আসছে। একই সঙ্গে সংসদে পিআর পদ্ধতি ও নির্বাচন ঘিরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার কথাও বলছেন তারা।
দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এর আগে পল্টন মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করা হবে তবুও ঘি লাগবেই।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আমরা আবিষ্কার করবো। আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।
তাহের বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই আগস্টের রক্তই হবে শেষ রক্তদান। এইসময়ের শাহাদাতই হবে শেষ শাহাদাত। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই বিপ্লবের পরে দাবি আদায়ে আর রাজপথে নেমে আসতে হবে না। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমাদের রাজপথে আসতে হয়েছে।
তাহের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না। ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় হবে। জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে হুবহু সেটাই আইনি ভিত্তি দিতে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করা হবে, ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, আপনারা চালাকি শুরু করেছেন। এই বলবো, সেই বলবো বলে জাতীয় নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি চলে আসছেন। আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আবিষ্কার করা হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য আটটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
তাহের বলেন, শুধুই বলেন- গণভোট আয়োজনে নাকি অনেক টাকা খরচা হবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে একটা গণভোট আয়োজন করা যায়। প্রত্যেকদিন একটা করে গণভোট আয়োজন করলেও সমস্যা হবে না। তাই সরকারকে বলবো, আর যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের বলবো, এসব বন্ধ করেন, তাহলে গণভোট আয়োজনে টাকার অভাব হবে না।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। যদি বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে আসেন বসি আলোচনা করি। সরকারও তো আলোচনা করতে বলেছে।
তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাননি বলে অভিযোগ করে বলেন, চেষ্টা করেছি, ফোনে পাই নাই। আজকের কর্মসূচির পর আমি আবারো চেষ্টা করবো। ওনাকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো, বিএনপিও যেন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেন। আর সময়ক্ষেপণ নয়, আর হিংসে, রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। জাতি মনে করে শুধু জুলাই সনদ নয়, সব ঠিক করা সম্ভব রাজনৈতিক সমঝোতায়।
জাতির কাছে ওয়াদা করতে হবে, শুধু জুলাই সনদ নয়, জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হবে? আমার দল কোথাও ভোটকেন্দ্র দখল করবে না, যদি করে তাহলে সেই আসনের ভোট বাতিল হবে। সকল দলকে একথা বলতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে হবে, যেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেরকম যদি একাধিক আসন হয় তাহলে নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দিবো। নতুন নির্বাচন হবে। এইকথা জাতিকে বলতে হবে। কারণ ৫৪ বছরে সঠিক কোনো নির্বাচন আমরা পাই নাই। জাতি আর কোনো প্রহসনের নির্বাচনকে আর মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে যাবে, শেখ হাসিনার যুগে চলে যাবে।
প্রশাসন একটি দলের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচনকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রভাবিত করা নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি তিনি।
ইসলামি আটটি দলের মধ্যে রয়েছে- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।