।।বিকে রিপোর্ট।।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়েছিলেন—এমন মন্তব্যে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত হয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা জানান তিনি।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এনসিপির এই আহ্বায়ক। মামলার অপর দুই আসামি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়েছেন।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দিয়ে কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার ভাষায়, এই বক্তব্য সরকারের দমন-পীড়নকে বৈধতা দেয় এবং আন্দোলনের ন্যায্যতা খাটো করে।
তিনি বলেন, ওই মন্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা অপমানিত হয়ে রাতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ১৭ জুলাই গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয় এবং শাহবাগ থানাসহ বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আমাদের ভাই-বোনদের হত্যার প্রতিবাদে আমরা দেশের সব শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। ১৮ জুলাই রাস্তায় নেমে আসেন সারাদেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আমরা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীরা জীবনের হুমকির মুখে পড়ি। এজন্য গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাই।
তিনি বলেন, ১৮ জুলাই সারাদেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। সেদিন রাতে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত-নিহত হন।
তবে ১৯ জুলাই আমরা বুঝতে পারি ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে সরকার। কারণ, আন্দোলনের কিংবা আহত-নিহতদের কোনো খবর মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার নাহিদের আংশিক জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর তার বাকি অংশ রেকর্ড করা হবে।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এছাড়া শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এদিকে, আজ সকালেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দি দিচ্ছেন সাক্ষীরা।