।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় কর্মরত ৬ জন শান্তিরক্ষী নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। হতাহতরা আবেইতে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীতে (ইউএনআইএসএফএ) কর্মরত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টের সদস্য ছিলেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
গুতেরেস বলেন, দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পাশাপাশি নিহত শান্তিরক্ষীদের পরিবারের প্রতি ‘গভীর সমবেদনা’ জ্ঞাপন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
শনিবার ১৩ ডিসেম্বর কর্ডোফানের মধ্যাঞ্চলীয় কাদুগলি শহরে অবস্থিত শান্তিরক্ষী সরবরাহ ঘাঁটিতে এই ভয়াবহ হামলাটি ঘটে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নিহত ৬ জন ও আহত ৮ জন শান্তিরক্ষীই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা সবাই জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনী আবেইতে কর্মরত ছিলেন।
সুদানের সেনাবাহিনী এই হামলার জন্য আধা-সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে দায়ী করেছে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী ও আরএসএফ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। তবে এ ঘটনায় আরএসএফের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এই হামলা ‘বিদ্রোহী মিলিশিয়া ও এর পেছনে যারা আছে তাদের ধ্বংসাত্মক মনোভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে’।
সেনাবাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যেখানে জাতিসংঘের স্থাপনাটির ওপরে ঘন কালো ধোঁয়ার স্তূপ দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই হামলায় ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন। তিনি জাতিসংঘের কাছে তার দেশের সেনাদের ‘যেকোনো প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তা’ প্রদান নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কঠিন মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে।’
যেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ আবেই হলো সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল।
২০১১ সাল থেকে সেখানে জাতিসংঘ মিশন মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহত্তম অবদানকারী দেশগুলির মধ্যে একটি। ইউএনআইএসএফএ-এর চার হাজার পুলিশ ও সৈন্য এই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সুদানে দ্রুত যুদ্ধ যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।