Breaking News:


শিরোনাম :
কপ৩০ সম্মেলনে আবারও আদিবাসীদের বিক্ষোভ পরকীয়া, ব্ল্যাকমেইল, খুন : আশরাফুল হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল র‍্যাব খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার ঢল দিনাজপুর-৩ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শুরু ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের থানায় বিস্ফোরণ: নিহত ৯, আহত ২৯ পেনাংয়ে বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর রোডশো লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউকের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির ঘরে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা ঢাকায় তাপমাত্রা নামলো ১৮ ডিগ্রিতে, আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে সিলেট টেস্ট: ইনিংস ও ৪৭ রানে জিতল বাংলাদেশ

পরকীয়া, ব্ল্যাকমেইল, খুন : আশরাফুল হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল র‍্যাব

  • আপলোড টাইম : ০১:২৭ পিএম, শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৬ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে দুটি ড্রাম থেকে উদ্ধার ২৬ খণ্ড লাশের পরিচয় সনাক্তের পর হত্যাকারী তার বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ও ডিবি। সেই রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার ১৫ নভেম্বর রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়েছিল বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর (৩৩)। এ জন্য এক মাস আগে আশরাফুলের সঙ্গে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন শামীমা। পরে তাকে ঢাকায় এনে খুন করে লাশ ২৬ টুকরো করেন জরেজ মিয়া ও শামীমা।

ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনির আখড়া এলাকা থেকে আশরাফুলের পায়জামা, পাঞ্জাবি, রক্তমাখা দড়ি, চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তার মোবাইল থেকেও বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি জব্দ করা হয়েছে।

ধৃত শামীমা ও জরেজুলকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, হত্যার পেছনে পরকীয়ার বিরোধ, ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা বা পূর্বশত্রুতা-কোনটি মূল কারণ, তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিষ্কার হবে।

তিনি আরও বলেন, আশরাফুলকে হত্যার পর লাশ গোপন করার জন্য জরেজুল চাপাতি ও দুটি ড্রাম সংগ্রহ করেন। পরদিন লাশ খণ্ড করে দুটি ড্রামে ভরে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের কাছে ফেলে যান তারা।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসামের বড় বিজরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে শামীমা আক্তারকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।

গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের লক্ষে একই গ্রামের বাসিন্দা বন্ধু জরেজুল ইসলামের সাথে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকাল থেকে আশরাফুলের পরিবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পায়।

পরবর্তীতে গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টে পানির পাম্প সংলগ্ন দুইটি নীল রংয়ের ড্রামের ভেতর অজ্ঞাত নামা পুরুষের ২৬ খণ্ডের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙ্গুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে সিআইডি নিশ্চিত হয় লাশটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।

তিনি আরও বলেন, শামীমার সঙ্গে জরেজের এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায়, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। জরেজ এই টাকার ৭ লাখ টাকা নেবে, আর শামীমা ৩ লাখ টাকা পাবে।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা নিহত আশরাফুল ইসলামের সাথে একমাস আগে থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ ভিকটিম আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজ ও আশরাফুল শামীমার সাথে দেখা করে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে ভাড়া বাসায় ওঠেন।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার আগে জরেজ তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে ফোনে জানান, আশরাফুলের সাথে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী আশরাফুলকে মালটার শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করেন শামীমা। যাতে বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে না পারে। পরবর্তীতে যখন তারা একান্ত সময় কাটায় তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিও শামীমার মোবাইলে ধারণ করা হয়, যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে।

শামীমার বরাত দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গত ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মারা যায়।

তিনি আরও জানান, আশরাফুলের মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্য গত ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। জরেজ চাপাতি দিয়ে লাশ ২৬ টুকরা করে দুইটি নীল রংয়ের ড্রামে ভরে রাখে। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি সিএনজিতে নিয়ে দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে বাসা থেকে রওনা করে। পথিমধ্যে তারা ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা চিন্তা করে সিএনজি পরিবর্তন করে অন্য একটি সিএনজিতে রওনা হন। দুপুর ৩টা ১৩ মিনিটে হাইর্কোট মাজার গেইটের নিকট এলে রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে লাশভর্তি ড্রামদুটি হাইকোর্টের পানির পাম্প সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে তারা অতিদ্রুত হাইকোর্ট এলাকা থেকে একটি অটো যোগে সায়েদাবাদ চলে যান।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর অটোরিকশাযোগে তারা সায়দাবাদের দিকে রওনা হন। পরে শামীমাকে কুমিল্লায় চলে যেতে বলেন জরেজুল এবং তিনি রংপুর চলে যাবেন বলে জানান। শামীমা কুমিল্লায় চলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ১০টায় কুমিল্লা থেকে জরেজুলকে গ্রেফতার করে ডিবি।

উল্লেখ্য, রংপুরে একই এলাকায় থাকার সুবাদে আশরাফুল ও জরেজুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। জরেজুলের মাধ্যমে আশরাফুলের পরিচয় হয় শামীমা আক্তারের সঙ্গে। ধীরে ধীরে আশরাফুল ও শামীমার মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ঢাকার দক্ষিণ ধনিয়ায় জরেজুল যে বাসা ভাড়া নেন, সেখানে শামীমাও গিয়ে ওঠেন। জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে ক্ষিপ্ত হয়ে জরেজুল আশরাফুলকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় শামীমাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানায় র‌্যাব।

তিনি আরও জানান, শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্লাকমেইল করে টাকা উপার্জন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্ব শত্রুতা আছে কি না তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসা জানা যাবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামে আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত না হলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।

আশরাফুল রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ১০ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. আবদুর রশীদ।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech