শিরোনাম :
সংঘর্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি ৫৬ শিক্ষার্থী, ১জন আইসিইউতে : চবিতে যৌথ বাহিনী মোতায়েন আ.লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করতে চায় জামায়াতে ইসলামী জাতীয় পার্টির ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছে: আসিফ মাহমুদ ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৮ জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ বাজারজাতকরণ উদ্বোধন করলেন দুই উপদেষ্টা চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ২য় দিনেও দফায় দফায় সংঘর্ষ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নুরের খোঁজ নিতে ফোন করলেন রাষ্ট্রপতি : উন্নত চিকিৎসা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস আরও দুই হাজার এমবিবিএস চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে

আল জাজিরার অনুসন্ধান: ২০২৪ সালের বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা

  • আপলোড টাইম : ১১:০০ এএম, শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৪১ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণবিক্ষোভ দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে কাতার ভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দমাতে ‘ওপর থেকে’ অর্থাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানে। তাদের অনুসন্ধানী দল ‘আই-ইউনিট’ গোপন টেলিফোন কথোপকথনের অডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা একটি ‘খোলা আদেশ’ জারি করে বিক্ষোভকারীদের ওপর যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং কেন্দ্র (এনটিএমসি) কর্তৃক রেকর্ড করা একটি কথোপকথনে হাসিনা তাঁর এক মিত্রকে বলেন, ‘আমি তো আগে থেকেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে, সেখানেই গুলি করবে। আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম… ছাত্রদের কথা ভাবছিলাম।’

ওই ফোনালাপে হাসিনা আরও বলেন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেখানে জটলা দেখবে, ওপর থেকেই—এখন ওপরে থেকেই হচ্ছে—এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু [বিক্ষোভকারী] নড়েছে।’

তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাবির শরীফ আই-ইউনিটকে জানান, ‘হেলিকপ্টার থেকে আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।

তিনি জানান, অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলির ক্ষত ছিল।

বেশিরভাগ বুলেট কাঁধ বা বুকে ঢুকেছে এবং শরীরেই থেকে গেছে। তখন এমন ধরনের রোগী বেশি আসছিল। এক্স-রেতে দেখে আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম—বুলেটগুলো অনেক বড় ছিল। তবে কী ধরনের বুলেট ব্যবহৃত হয়েছিল, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।

প্রসঙ্গত, হাসিনা টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারত পালিয়ে যান। তার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তাক্ত বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ২০,০০০ জন আহত হন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

আল জাজিরা জানায়, ফোনালাপের অডিওগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কোনোভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, তা শনাক্তে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিশ্লেষণ করানো হয় এবং কণ্ঠস্বর মেলানোর মাধ্যমে বক্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

আইসিটি ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা, তার দুই মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর আগস্টে তাদের বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-ই রেকর্ড করেছে তাঁর একাধিক গোপন ফোনালাপ। আল জাজিরা জানায়, শুধু বিরোধী নয়, হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও গোয়েন্দা নজরদারি চালাত এনটিএমসি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় অন্য প্রান্ত থেকে বলা হতো, ‘এই বিষয়ে ফোনে কথা না বলাই ভালো।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘হ্যাঁ, জানি, জানি, জানি, এটা রেকর্ড হচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি যোগ করেন, ‘অন্যদের জন্য উনি অনেক গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন, এখন সেই গর্তেই তিনি নিজেই পড়ে গেছেন।’

২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্ট ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, এই কোটা ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যাহত হয়।

বিক্ষোভ আরও তীব্র হয় ১৬ জুলাই, যখন রংপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ নিহত হন। এটি ছিল জুলাই গণ-আন্দোলনের এক মোড় ঘোরানো ঘটনা।

হাসিনার উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমানের একটি গোপন ফোনালাপে তাকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়: ‘অটোপসি রিপোর্ট পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? রংপুর মেডিকেল কী লুকোচুরি খেলছে?’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাকে পাঁচবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাল্টাতে বাধ্য করে পুলিশ, যেন একাধিক গুলিবিদ্ধের উল্লেখ না থাকে। তারা চেয়েছিল রিপোর্টে লেখা হোক—সাঈদ ভাই পাথরের আঘাতে মারা গেছেন। অথচ তিনি গুলিতে মারা যান।’

সাঈদ নিহত হওয়ার ১২ দিন পর তার পরিবারসহ ৪০টি নিহত পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে। এই বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করে সরকার।

সেখানে শেখ হাসিনা প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন এবং বলেন, আমরা তোমাদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করব।

সাঈদের বোন সুমি খাতুন সরাসরিই জবাব দেন, ভিডিওতে তো দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে? এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে।

সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, আমাদের জোর করে গণভবনে আনা হয়েছে। না এলে অন্যভাবে হয়রানি করা হতো।

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করেন, হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলেননি। এই ফোনালাপ হয় কৌশলে বাছাই করা, নয়তো সম্পাদিত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকার আন্তরিক। এ নিয়ে কোনো লুকোচুরি নেই।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শেখ হাসিনা কখনও ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলেননি এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশও দেননি।

তিনি বলেন, এই ফোনালাপ খণ্ডিতভাবে নতুবা বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে অথবা দুটিই করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকার ‘গভীর আন্তরিকতা’ দেখিয়েছে।

আল-জাজিরার ৫০ মিনিটের সেই প্রতিবেদনটি দেখুন এই লিংকে

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech