।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
টানা ৬ ঘন্টার ভারী বৃস্টিপাতে ডুবলো কলকাতা। রাতভর ভারী বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। শহরের যানবাহন, রেল, মেট্রো ও ফ্লাইট চলাচলেও নেমে এসেছে বিপর্যয়।
মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও ডয়েচে ভেলে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ১৫০ থেকে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গড়িয়ার কামডহরিতে ৩৩২ মিলিমিটার, যোধপুর পার্কে ২৮৫, কালীঘাটে ২৮০, তপসিয়ায় ২৭৫, চেতলায় ২৬২, মানিকতলায় ১৪৭ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি, সল্টলেক, বেহালা, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, গড়িয়া, কসবা, যাদবপুর, আলিপুর, ভবানীপুর, সন্তোষপুর, মানিকতলাসহ কলকাতার বহু এলাকা জলমগ্ন। রাজভবনের পাশ থেকে শুরু করে রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত পুরো এলাকা জলমগ্ন। কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তা জলমগ্ন।
এনডিটিভি বলছে, জলাবদ্ধতায় শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। উপকণ্ঠের রেল ও মেট্রো সেবাতেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। শহরের নিম্নাঞ্চলে বহু বসতবাড়িতে ঘরে পানি ঢুকে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছের অনেকে। বেশ কয়েকটি স্কুল আজ ছুটি ঘোষণা করেছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলেই এই বৃষ্টি হচ্ছে। শহরবাসীকে আরও বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
ডিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নেতাজিনগর থেকে ইন্দ্রনীল রায় ফেসবুকে জানাচ্ছেন, তার বাড়ির সামনে এক ফলওয়ালা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। ফল ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুণ্ডু তার দোকানে এসেছিলেন। সাইকেল রাস্তায় বিদ্যুেতের খুঁটিতে রাখতে যান এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে একটি কুকুর সেই সাইকেলে চড়তে যায়। কুকুরটিও মারা গেছে। মোমিনপুর থেকেও একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তার নাম জিতেন্দ্র সিং। গড়ফা, কালিকাপুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষ মারা গেছেন।
এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসব শুরুর ঠিক আগে এ ধরনের প্রবল বর্ষণে কলকাতা জুড়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ যে পূজা মণ্ডপগুলো দেখতে আসেন, সেগুলোর প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে মাসব্যাপী শ্রমে তৈরি মণ্ডপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া জলাবদ্ধ রাস্তাঘাটের কারণে কলকাতা বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো ইতোমধ্যেই ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কলকাতা থেকে আসা-যাওয়ার ফ্লাইট বিলম্বিত হতে পারে। বিমানবন্দরে আসার আগে আপনার ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করুন এবং যানজট ও জলাবদ্ধতার কারণে বাড়তি সময় রাখুন।”
ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ভারী বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের কারণে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ধীরগতির হতে পারে। আমরা আকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, তবে মাটিতে যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
হাওড়া, শিয়ালদহ, চিৎপুরে কারশেডে জল জমে গেছে। জল জমার কারণে শিয়ালদর মেন, বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত।
দমদম স্টেশনেই ট্রেন আসতে পারছে না। সেখানে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, যখন ট্রেন ঢুকতে পারবে, তখন তা শিয়ালদহের দিকে যাবে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।
হাওড়াতেও বৃষ্টির কারণে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলের কয়েকটি স্টেশনে জল ঢুকে গেছে। ফলে মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
মূলত রাতভর এই বর্ষণের জেরে শুধু কলকাতাবাসীই নয়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্যান্য শহর ও দেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে আসা যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরো বৃষ্টি হতে পারে। পুজোর দিনগুলিতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র-এনডিটিভি/ডয়েচে ভেলে।