।।বিকে রিপোর্ট।।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ মোট ৯ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা পুলিশ আটকে দিলে সংর্ঘষে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়।
মঙ্গলবার ১১ মার্চ বিকাল পৌনে চারটার দিকে পদযাত্রাটি শাহবাগ পার হয়ে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় ব্যারিকেড দিয়ে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের প্ল্যাটফর্মের নেতাকর্মীদের এই পদযাত্রা আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন। পথে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়।
পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দুই দফা লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের ওপর চড়াও হলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলেন, সারা দেশে অব্যাহতভাবে খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। যা ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থ হয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এসব নিপীড়নের বিচার করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
একই সঙ্গে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাসহ সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচার, অংশীজনদের অংশগ্রহণে ধর্ষণ ও নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহের যৌক্তিক সংস্কার, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়নবিরোধী সেল আইন করে কার্যকর করার দাবিও জানান তারা।
পদযাত্রায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সীমা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া শাইনা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত আছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থামানো হয় এবং বলা হয় একটি ছোট প্রতিনিধিদল নিয়ে স্মারকলিপি দিতে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং একজন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের দাবি, তাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সংঘর্ষে পুলিশেরও কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রাজধানীতে ধর্ষণবিরোধী মিছিলকারীদের হামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)র কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বিকেল আনুমানিক ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রা নামে নারী-পুরুষসহ ৬০/৭০ জনের একটি বিক্ষোভকারী দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে বাধা প্রদান করে। এ সময় উক্ত পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে।
এতে বলা হয়, নিকটবর্তী স্থানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করলে তারা উল্টো পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে উদ্ধত ও মারমুখী আচরণ আরম্ভ করে। এ সময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারীদের নখের আঁচড়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাদের হামলায় রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া হামলাকারীদের আঘাতে রমনা ডিভিশনের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম, দুই নারী পুলিশ সদস্য এবং তিনজন পুরুষ কনস্টেবল আহত হন। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের মাধ্যমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।