।।বিকে রিপোর্ট।।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ ভয়াবহ অর্থ সংকটের কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশুর প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
রবিবার ২৪ আগস্ট ইউনিসেফের কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এ কথা জানান। কক্সবাজারে শুরু হওয়া তিন দিনের সম্মেলনের সময়ই ইউনিসেফ এ তথ্য জানাল।
তিনি বলেন, অর্থ সংকট মোকাবিলা করতে চেষ্টা করলেও তারা প্রায় দেড় লাখ কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে স্কুলে যেতে বাধ্য করতে পারছেন না। যার ফলে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ৩০ বছরের কর্মজীবনে এত বড় অর্থ সংকট আমি দেখিনি। প্যালেস্টাইনসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ছুটে যাওয়ায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।
ইউনিসেফের তথ্য মতে, এতদিন প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার ৭৫ শতাংশই ইউনিসেফের আওতায় পড়াশোনা করতো। তবে তহবিল সংকটে শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা নয়, ইংরেজি শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশও বাদ দিতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে রানা ফ্লাওয়ার্স ব্যাখ্যা দেন, বাংলাদেশ সরকারের নীতির কারণে নয়, অর্থ সংকটের কারণেই ইংরেজি শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। এ সংকটের প্রভাবে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, চাকরিচ্যুত হয়েছেন স্থানীয় শিক্ষকরাও।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন, যদিও এখনও এক হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশি শিক্ষক কর্মরত আছেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা ৩ হাজার ৮৭৩ জন রোহিঙ্গা শিক্ষকের অনেকেরই বেতন বন্ধ রয়েছে।
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন ও কিছু ভায়োলেন্ট বক্তব্যের কারণে চলমান প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন রানা ফ্লাওয়ার্স।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। প্রতি বছর এ অঞ্চলে জন্ম নেয় ৩০ হাজার শিশু।
এদিকে গতকাল থেকে রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপদ প্রত্যাবাসন’সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কক্সবাজারে “স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন” শীর্ষক তিন দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের থিম্যাটিক অধিবেশনের মধ্যে মানবিক সহায়তা ও তহবিল সংকটও গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হবে।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী খিন মং বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখা এবং শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের প্রত্যাবাসন।