।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনার টেবিলে মার্কিন প্রশাসনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও আছেন।
মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা জানিয়েছে ইউক্রেনের পক্ষে কাউকে এই আলোচনায় দেখা যায়নি। রিয়াদে সাংবাদিকেরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকটি আজ সকালে সৌদি রাজধানীর দিরিয়াহ প্রাসাদে শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকদের মতে ভাঙা সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রাথমিক আলোচনা শুরু করতেই এই বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম উচ্চপর্যায়ের কোনো বৈঠকে এটি।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের মানে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা শুরু নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়- যুদ্ধের ইতি টানার বিষয়ে রাশিয়া কতটা আন্তরিক।
এদিকে রাশিয়া বলছে, এই বৈঠক হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে এই আলোচনাকে।
অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার একজন কর্মকর্তা আজ মঙ্গলবার রিয়াদে বলেছেন, রাশিয়া আগামী কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক আলোচনায় অগ্রগতির আশা করছে। মস্কোতে আশা জেগেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন আক্রমণের কারণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে পারেন।
রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে অর্থনৈতিক আলোচনায় রাশিয়ার প্রধান আলোচক কিরিল দিমিত্রিভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, ‘আমাদের কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যা আমাদের সহকর্মীরা বিবেচনা করছেন। আমি মনে করি, আগামী দু–তিন মাসের মধ্যে সম্ভবত অগ্রগতি হবে।
তবে, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যকার এই আলোচনা নিয়ে ইউক্রেন এবং ইউরোপ বেশ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেমলিনের দিকে নমনীয় মনোভাব প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগটা বেড়েছে।
গতকাল সোমবার ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন, যেখানে নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক পরিবর্তনের উদ্যোগে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিও এই আলোচনার এজেন্ডায় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠক নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রিয়াদের আলোচনায় কিয়েভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, যেকোনো শান্তি চুক্তিতে ‘দৃঢ় এবং নির্ভরযোগ্য’ নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা ফ্রান্স এবং ব্রিটেন দাবি করেছে।
তবে সব ইউরোপীয় শক্তি এটি সমর্থন করে না।
ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যাচ্ছে, জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ রিয়াদের আলোচনা সম্পর্কে ‘কিছুই জানত না’ এবং ‘আমাদের ছাড়া আমাদের সম্পর্কে কোনো বিষয় বা চুক্তি আমরা স্বীকৃতি দিতে পারি না।’
এদিকে বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন ইউক্রেনে শান্তির প্রচেষ্টা’কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘একই সময়ে, আমরা আশা করি, সব পক্ষ এবং অংশীজনরা আলোচনায় অংশ নেবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই বৈঠকের ঘোষণা আসার পরই ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে পৃথক এক বৈঠক করেছেন। সেখানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দরকার হলে তিনি দেশটিতে সেনা পাঠাতে রাজি আছেন।
তবে জার্মানি এই প্রস্তাবকে “অসঙ্গত’ বলে উল্লেখ করেছে।