Breaking News:


শিরোনাম :
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে আরও জোরদার সম্পর্ক চায় : প্রণয় ভার্মা আবহাওয়া প্রধানত শুষ্কই থাকবে- রাতে শীতের আমেজ ইসি প্রস্তুত, তফসিল ঘোষণার দিন এখনও নির্ধারণ হয়নি: ইসি সচিব শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন কি না তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: জয়শঙ্কর স্বৈরাচারী হাসিনা কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি: সালাহউদ্দিন বিদেশে নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন: শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে লন্ডন যাত্রা বলাকা কমিউটারের ইঞ্জিন বিকল: ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ যশোর মুক্ত দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচি জলবায়ু পরিবর্তনে নারীরাই দ্রুত অভিযোজনমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন-: পরিবেশ উপদেষ্টা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে জুবাইদা রহমান

অবশেষে তিস্তায় ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন

  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬ পিএম, বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫
  • ২০৭ Time View
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
উত্তরের জনপদে যুগান্তকারী যোগাযোগ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হলো গাইবান্ধার হরিপুর-চিলমারী ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র স্বপ্নযাত্রা।

বুধবার ২০ আগস্ট দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। উদ্বোধনের পরপরই মোনাজাত করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক।

সঙ্গে সঙ্গেই হাজারো মানুষ দলে দলে সেতুতে উঠে পড়েন। তারা সেতুর ওপর দলবেঁধে ছবি ওঠাতে থাকেন এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাস করতে থাকেন। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে করমর্দন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এলজিইডি কর্মকর্তা, সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং উপদেষ্টার সফর সঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনের আগে থেকেই সেতু সংলগ্ন এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোর থেকেই তিস্তাপাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন হাজারও মানুষ। কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউবা দলবেঁধে আসেন জীবনের ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে—এই আনন্দে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস।

এর আগে গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটি হবে ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’।

২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতা ও একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর চালু হলো এই সেতু।

এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা।

১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু। ফলে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার সরাসরি সংযুক্ত হবে।

সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা–কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় আসবে বড় পরিবর্তন। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে। গড়ে উঠবে ছোট-মাঝারি শিল্প কারখানা।

ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভূরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০–১০০ কিলোমিটার। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাদের দাবি, ১৯৯৫ সাল থেকে শরিতুল্যাহ মাস্টার আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন সেতুর জন্য। তিনি ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করেছিলেন। তার নিরলস প্রচেষ্টাতেই সেতুটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তাই তার স্মৃতি অম্লান রাখতে ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করার দাবি তুলেছিলেন এলাকাবাসী।

সব বিতর্ক ছাপিয়ে তিস্তার দুই পারের মানুষ এখন উচ্ছ্বসিত। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পর আজ থেকে শুরু হলো তাদের নতুন যাত্রা।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech