।।বিকে রিপোর্ট।।
প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করার সময় সেটি পরিপূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
একই সঙ্গে সামাজির সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ শুল্ক-করে কিছু পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
রবিবার ২২ জুন বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা জানান।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট এবং ভবন কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়। তবে এ নিয়ে সমালোচনার পরিপেক্ষিতে তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এলো।
সংবাদ সম্মেলনে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয় নতুন বাজেট নিয়ে উপদেষ্টার ভাষণ।
সাধারনত নির্বাচিত সরকারের আমলে বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সংসদে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়। প্রস্তাবিত এ বাজেটের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
অনুমোদিত বাজেট নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, এখন প্রশ্ন আসতে আসতে পারে, যারা আগে টাকা দেখায়নি (অপদর্শিত অর্থ রয়েছে), তাদের এখন কী হবে? তাদের জন্য যেটা আছে, সেটা হচ্ছে তারা রেগুলার ট্যাক্স দেবে। মার্জিনাল ট্যাক্স ৩০ শতাংশ প্লাস ১০ শতাংশ অতিরিক্ত দেবে। এটা কালো টাকা বলে আমরা মনে করি না। ফলে কেউ কিন্তু এটা নিয়ে আপত্তিও করে নাই।
তিনি আরও বলেন, ভবন বা ফ্ল্যাটে স্কয়ার ফুট অনুযায়ী কর দিয়ে যারা কালো টাকা সাদা করত, রেগুলার ট্যাক্সের থেকে অনেক কম ট্যাক্স দিয়ে তারা পার পেত। সেটা আমরা পাঁচ গুণের মত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও যেহেতু একটা বড় দাবি এসেছিল, এবার আমরা এটা বিলোপ করে দিয়েছি।
বাজেটের চমক কী এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘চমক দেওয়ার জন্য আমরা আসিনি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য খাদের কিনার থেকে অর্থনীতিকে তুলে নিয়ে আসা। এমন পরিস্থিতিতে চমক দেওয়ার মত কিছু করার নেই। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার করেই বাজেট দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত বাজেটটি যথাযথ ও সময়োপযোগী।