।।বিকে স্পোর্টস রিপোর্ট।।
গলে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার গল টেস্ট ‘ড্র’ হয়েছে। দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৯৫ রানের জবাবে ৪৮৫ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তাতে ২৯৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় লংকানদের সামনে।
২৯৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আক্রমণাত্মক শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। দিনের খেলা ৩৭ ওভার বাকি থাকতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলংকা। তবে হিতে বিপরীত হয়েছে। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উল্টো দ্রুত সাজঘরে ফিরেছেন দুই ওপেনার। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে তাইজুলকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে শট চেক করেন লাহিরু উদারা। তবে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি। বল ধরে দ্রুতই উইকেট ভেঙেছেন লিটন দাস। ১৩ বলে ৯ রান করে লাহিরু বিদায় নিলে ভাঙে ৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এক বল পরই ফিরেছেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। নাঈমের বলে শান্তর হাতে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ বলে ২৪ রান। পঞ্চম দিনের চা বিরতির আগে পর্যন্ত নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। বিরতি থেকে ফিরে আর দুই উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
২৩ ওভার ১ বলের মধ্যেই স্বাগতিকদের ৪ উইকেট তুলে কিছুটা জয়ের আশা দেখায় বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম উইকেটে মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (৩০ বলে ১২*) ও কামিন্দু মেন্ডিস (৩৫ বলে ১২*)। শেষদিকে ৫ ওভার বাকি থাকতেই তাই ড্র মেনে নেয় দুই দল।
এবার টেস্ট ম্যাচে বেশিরভাগ সময় চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্ত-মুশফিকুর রহিমদের দারুণ ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়েছিল টাইগাররা। তবে গলের ব্যাটিং স্বর্গে ভালোই জবাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তারপরও ১০ রানের ছোট লিড পেয়েছিল সফরকারীরা।
সেটার সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্তর দারুণ ব্যাটিংয়ে ইনিংস ঘোষণার সাহস পায় বাংলাদেশ। তখনও দিনের খেলার ৩৭ ওভার বাকি ছিল। তবে এই সময়ে লঙ্কানদের ৪ উইকেটের বেশি তুলতে পারেনি টাইগাররা। ফলে ড্র দিয়েই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করল বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলংকার ৩ উইকেট নিয়ে ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলামের। লাহিরু উদানা, দিনেশ চান্দিমাল ও বিদায়ী টেস্ট খেলা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসদের উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাদের কেউই দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করতে পারেননি। আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ২৫ বলে ২৪ রান করে আউট হন। তাকে আউট করেন নাঈম হাসান।
আজ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি আদায় করেন শান্ত। ১৯৯ বলে ১২৫ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি। এর আগে প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তবে হাফ সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থাকতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যান প্রথম ইনিংসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। লিটন দাস আর জাকের আলী দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শান্তর সঙ্গে ২৩ বলে ৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন নাঈম।
এর আগে ৫ম দিনের খেলার শুরুতে ১৮৭ রানের লিড ছিল বাংলাদেশের। অপরাজিত ছিলেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। দুজনের এদিনের শুরুটা ছিল সাবধানী আর ধীরগতির। সেখান থেকে অবশ্য বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়েও ছিল না। লাঞ্চের আগে বৃষ্টি হানা দেয়। তার ঠিক আগের বলে মুশফিক রানআউট হন ৪৯ রানে। শান্ত তখন সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে।
এই একটা সেঞ্চুরিই শান্তর নাম তুলতে পারতো বৈশ্বিক কিংবদন্তিদের রেকর্ডে। শান্ত তাই সাবধানী হয়েই খেললেন। ১১ রান করতে খরচ করেছেন ২২ বল। তবে অপরপাশে স্পিনের দুর্দান্ত সুইংয়ে বোকা হয়ে ফিরতে হয়েছে লিটন কুমার দাস এবং জাকের আলী অনিককে। এরপর নাইম সঙ্গ দিয়েছেন দারুণভাবে। সেঞ্চুরির পর শান্তও ছিলেন আগ্রাসী।
শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তাতে লঙ্কানদের জন্য লক্ষ্য দাড়ায় ২৯৬ রানের।