উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন ১৭ নভেম্বর।
রবিবার ১৭ নভেম্বর এ উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় ভক্তদের জন্য একটি বিশেষ উপহারের ঘোষনা দিলেন তিনি।উপহারটি হলো অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘রুনা লায়লা’। প্রথমবারের মতো ইউটিউব চ্যানেলে খুলেছেন তিনি।
ভিডিও বার্তায় রুনা বলেন, আমার প্রতি জন্মদিনে আপনারা অনেক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান, ভালোবাসা দেন, উপহার দেন। সেই সঙ্গে দোয়া-আশীর্বাদ তো থাকেই আপনাদের। ভাবছি আমার এবারের জন্মদিনে আপনাদের একটা উপহার দেব। আর সেটি হচ্ছে আমার ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব চ্যানেলটির লিংক হলো (https://www.youtube.com/@TheRunaLaila)।
ভিডিও ভালো লাগলে লাইক, সাবস্ক্রাইব ও শেয়ার করার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশবরেণ্য এই সংগীতশিল্পী।
ভিডিওবার্তায় রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘গানের জগতে আমার ৬০ বছরের পথচলায় যা কিছু করেছি এবং আগামীতে কী করতে চাই সেগুলো তুলে ধরতে আপনাদের সবাইকে পাশে চাই। আপনাদের ভালোবাসা যেন থাকে। আপনারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। নিজের যত্ন নেবেন। আমি সবাইকে ভালোবাসি। অনেক ধন্যবাদ।’
এদিকে, রুনা লায়লার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা প্রথম ভিডিওটি হলো ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব ‘। যা প্রচার হয়েছিল বিটিভিতে। গানটির কথা লিখেছেন মাসুদ করিম, সুর করেছেন সুবল দাস।
আর দ্বিতীয় ভিডিও হিসেবে থাকছে তারই গান ‘হ্যালো হাই’। বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে গানটি ছিল ‘সুপারুনা’ অ্যালবামে। ১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর ইএমআই মিউজিক কোম্পানি থেকে প্রকাশিত এই অ্যালবামটি প্রথম দিনেই ১ লাখ কপি বিক্রি হয়। এজন্য উপহার হিসেবে গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন রুনা লায়লা। অ্যালবামটির কাজ হয়েছিল লন্ডনে, যেখানে একসময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলস গান রেকর্ডিং করত।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পী ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। এরমধ্যে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলিউডের ‘ঘারোন্দা’ (১৯৭৭) সিনেমাতে জয়দেবের সুরে ‘তুমহে হো না হো’ ও ‘দো দিওয়ানে শেহার মে’ (সহশিল্পী: ভূপিন্দর সিং) গান দুটি আপলোড করেছেন তিনি। এছাড়া রয়েছে একটি করে বাংলা দেশাত্মবোধক ও ফোক গান এবং পাঞ্জাবি গান।
এই গুনি শিল্পি ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় দশকের সংগীত ক্যারিয়ারে তার প্রাপ্তি অসামান্য। কালজয়ী অসংখ্য গান উপহার দিয়েছেন তিনি। গেয়েছে বলিউডের খ্যাতিমান সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গেও।
উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। পেয়েছেন গোল্ড ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড। গানের বাইরে সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন রুনা লায়লা। হয়েছেন মডেলও। এছাড়াও সংগীতের বিভিন্ন রিয়েলিটি শো’র বিচারকের আসনে বসেছেন তিনি।
রুনা লায়লা মোট আটবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ‘দি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ও ‘তুমি আসবে বলে’, সিনেমাতে গান গেয়ে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
তার কালজয়ী গানের তালিকায় আছে- ‘যখন আমি থাকব নাকো’, ‘বুকে আমার আগুন জ্বলে’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’, ‘আয়রে মেঘ আয়রে’, ‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত’, ‘সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল’ ইত্যাদি। আর দেশের গানের তালিকায় আছে ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যরাগে’, ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো’।
জন্মদিন উপলক্ষে ভক্ত, স্বজন, পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভরে আছে সেসব ভালোবাসায়। কিংবদন্তি এই শিল্পীর গান গেয়ে সম্মান জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীরাও।