বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ইউনিভার্সাল পিকচার্স স্টুডিওর পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে এই তথ্যচিত্র। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাজন প্রাইম ভিডিও, অ্যাপল টিভি অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে তথ্যচিত্রটি মুক্তি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ওয়েবসাইটে।
ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ওয়েবসাইটে তথ্যচিত্র মুক্তির বিষয়টি জানিয়ে বলা হয়, ১৫ আগস্ট তথ্যচিত্রটি মুক্তি পেয়েছে। তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন যৌথভাবে ড্যানিয়েল গর্ডন, ব্রেন্ডন ডনোভান এবং ব্রায়ান ইভানস।তথ্যচিত্রটি অভিনয় করেছেন—মিশা গ্লেনি, মিকো হিপ্পোনেন, কৃষ্ণা দাস, রাকেশ আস্তানা এবং রাফাল রহোজিনস্কিসহ আরও অনেকে।
ড্যানিয়েল গর্ডনের পরিচালনায় ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ শীর্ষক এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের সেই আলোচিত চুরির আদ্যোপান্ত।
যে ঘটনা সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তো বটেই, পুরো বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে বড় ঝাঁকুনি দিয়েছিল। তথ্যচিত্রটিতে পরিচালক গর্ডন দেখিয়েছেন কীভাবে একদল সাইবার সিকিউরিটি হ্যাকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি কিবোর্ডে সামান্য লেখার ত্রুটিতে (টাইপো) কীভাবে আরও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের, সেটি এই তথ্যচিত্রে রয়েছে।
এটি দেখিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালের সেই ঘটনা বিশ্বব্যাপী যে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল, তাতে বৈশ্বিক আন্তব্যাংক ব্যবস্থার ঝুঁকির বাস্তবতা ভয়ানকভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনার পর সারা বিশ্বে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা যে উচ্চ সতর্কাবস্থায় চলে গেছেন, তার একটি স্মারক হতে পারে এই তথ্যচিত্র।
‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’-এ দেখানো হয়েছে, কীভাবে হ্যাকাররা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল। সুইফট হলো সারা বিশ্বের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি মেসেজিং নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একে অপরের মধ্যে অর্থ স্থানান্তর করে। সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করেই হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার সরায়। শেষ পর্যন্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা। বাকি টাকা তাদের সামান্য ভুলের কারণে আটকে যায় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
বিভিন্ন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও লেখক মিশা গ্লেনির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’। তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে একটি বৃহত্তর চিত্রের খণ্ডিত অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনা দেখিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার ক্রাইম কতটা চৌকস এবং সাধারণ হয়ে উঠেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি এবং কীভাবে হ্যাকাররা পরবর্তী আক্রমণের জন্য নিজেদের আরও প্রস্তুত করে তুলেছে, তথ্যচিত্রে সে বিষয়েরও পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এ ঘটনায় ম্যানিলাভিত্তিক আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছিল ৷ সেখান থেকে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোগুলোতে সেগুলো ব্যয় করা হয়।
চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আরসিবিসি থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে পাঠানো আরও ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছে ৷ আরও ৬৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।