বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ভারতের মুর্শিদাবাদে। চুক্তিভঙ্গ এবং প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ পরোয়ারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
এই মামলায় মমতাজের বিরুদ্ধে এর আগেও তিন বার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এর পর তিনি মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
আদালতের নির্দেশ মোতাবেক, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মমতাজকে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ৯ আগস্ট মুর্শিদাবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল মমতাজের। ৮ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মমতাজের মামলার চার্জ গঠন করা হবে। সেই দিন মমতাজ উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। এর পরেই মমতাজ বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে একটি আবেদনপত্র আদালতে দাখিল করে জানান, ওই সময়ে তিনি কানাডায় একটি অনুষ্ঠানে থাকবেন। ফলে তার পক্ষে আদালতে হাজিরা দেওয়া সম্ভব হবে না। মুর্শিদাবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে— মুর্শিদাবাদে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তা শক্তিশঙ্কর বাগচীর সঙ্গে মমতাজের লিখিত চুক্তি হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক শক্তিশঙ্করের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতাজ নিয়মিত অংশ নিতেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ১৪ লাখ টাকায় মুর্শিদাবাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল শিল্পীর। তিনি অগ্রিম টাকাও নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি মমতাজ। এর পরেই শক্তিশঙ্কর চুক্তিভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মমতাজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার ভিত্তিতে আদালত পরবর্তী সময়ে সমন জারি করে।
এই বিষয়ে গত ১৬ আগস্ট বুধবার বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে মমতাজ বেগম তার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যে চুক্তিভঙ্গ এবং প্রতারণার মামলার অবস্থান তুলে ধরেন।
ফেসবুকে তিনি বলেন, আমার প্রিয় এলাকা বাসি ও সারাদেশে আমার গানের ভক্ত আশেকান এবং আমার শুভাকাংক্ষী যারা রয়েছেন, তারা কয়দিন যাবত একটা নিউজ এর পরিপেক্ষিতে খুব মন খারাপ করে আছেন। এটার সত্যতা কতটুকু জানতে চাচ্ছেন। আমি বিদেশ ছিলাম ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। দেশে ফিরেই ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবস নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাই। এই জন্য এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠেনি।
হ্যা এই কথা সত্য যে, বেশ অনেক বছর আগে ভারতে বহরমপুর কোর্টে আমার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি একটা মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের করেন, যার মূল উদ্দেশ্যে ছিলো আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়া। আর ওই ব্যক্তি ছাড়া আমি যেনো কারো মাধ্যমে ভারতে কোনো কনসার্ট করতে না পারি। কোনও ডকুমেন্ট ছাড়া ১৪ লাখ টাকা নেয়ার একটি মিথ্যা মামলা উনি সাজিয়েছেন, যার কোনো প্রমাণ এই ১৪-১৫ বৎসরে কোর্টে দাখিল করতে পারেনি।
এই বছরও আমি দুইবার কোর্টে হাজির হই। কিন্তু দুঃখের বিষয় মামলার বাদি ২ বারই অসুস্থ বলে কোর্টে অনুপস্থিত থাকেন। তার মূল উদ্দেশ্যে হলো-আমাকে হয়রানি করা। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দ্রত এই মামলাটি যাতে শেষ হয় বিজ্ঞ আদালতকে অনুরোধ করি। কিন্তু আদালত শেষ যে তারিখটি দিয়েছিলো ওই সময় আমার আগে থেকেই কানাডা একটা প্রোগ্রাম নেয়া ছিলো বিধায় আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি।
তবে আমি আদালতকে এই বিষয়ে অবহিত করি। পরবর্তীতে একটা সময় চাইলে বিজ্ঞ আদালত সেটা গ্রহণ করে আমাকে সেপ্টেম্বরের ৮ পুনরায় ডেট দেন। আশা করি আমি ৮ তারিখে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত একটা সিদ্ধান্ত নিবেন এবং পরবর্তী কি করণীয় তা জানতে পারবো। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা সবাই আমার উপর আল্লাহর ওয়াস্তে এই আস্থা বিশ্বাস রাখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেনো, কারো ক্ষতি না করি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।