National Online News Portal of Bangladesh - বাংলাদেশের জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল - بوابة الأخبار الوطنية على الإنترنت لبنغلاديش - बांग्लादेश का राष्ट्रीय ऑनलाइन समाचार पोर्टल - بنگلہ دیش کا قومی آن لائن نیوز پورٹل
ছবি: ফাইল ফটো

কেন আত্মহত্যা করলেন সাদি মহম্মদ? অভিমান! বিষণ্ণতা! নাকি শোক! (ভিডিও)

  ।।বিকে রিপোর্ট।।  বৃহস্পতিবার | মার্চ ১৪, ২০২৪ | ১০:২৬ এএম

কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ আত্মহত্যার মাধ্যমে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ।

বুধবার ১৩ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের নিজ বাসার গান করার ঘরে মেলে তার ঝুলন্ত মরদেহ। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন।

সাদি মহম্মদের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন তার ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ। শিবলী গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার রোজারত অবস্থায় সারাদিন ভালোই ছিলেন ভাইয়া। তানপুরা নিয়ে সংগীত চর্চা করেন। ইফতার করেন স্বাভাবিকভাবেই। সন্ধ্যার পর দীর্ঘক্ষণ তার গান ঘরের দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক ডাকাডাকির পরও কোনও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ওই ঘরে মেলে তার ঝুলন্ত লাশ।

পুলিশের ধারণা, মায়ের মৃত্যু শোকে ইফতারের পর স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন এই শিল্পী। ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা, শিল্পী সাদি মহম্মদ আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত হলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।’

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া জানায়, খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে নূরজাহান রোডের বাসার তৃতীয় তলার যে ঘরে বসে সাদি মহম্মদ গান করতেন সেই ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে কিভাবে ওই শিল্পির মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে।

জানা গেছে, গত বছরের ৮ জুলাই সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান শিল্পী সাদি মহম্মদ। মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, মা হারানোর বেদনা তিনি নিতে পারেননি।

সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সাদি মোহাম্মদের মৃত্যুর খবরে সাংস্কৃতিন অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাতে সাদি মহম্মদদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজন, শুভাকাংখী সহ নৃত্যশিল্পী স্নাতা শাহরিন, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ, নাট্যনির্দেশক পান্থ শাহরিয়ারসহ অনেকে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে এসেছেন। স্বজনরা জানায়, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য মরদেহ আসতে একটু দেরি হবে। এরপর পরিবার থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।

সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন শিল্পী ও সুরকার। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমী থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না সাদিকে। গতবছর জুলাই মাসে মারা যান সাদি-শিবলীর মা বেগম জেবুন্নেসা সলিম উল্লাহ। তারপর থেকে সাদি নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন।

সাদি মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবা সলিম উল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ছিল সখ্য। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহর আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদি-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিম উল্লাহকে। তার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।

অভিমান আর বিষণ্ণতা থেকে আ*ত্ম*হত্যা করলেন সংগীত শিল্পী সাদী মহম্মদ