কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত।
বিজয়ের পরদিন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন দুপুরে ঝাউতলা এলাকায় তার নিজের গাড়িতে বসে নগরীর উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, প্রথম কাজ হবে এযাবৎকালে সিটি করপোরেশনে যত দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। পাশাপাশি কাউন্সিলর, নারী কাউন্সিলর এবং বিশিষ্ট নগরবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে কুমিল্লা নগরকে কীভাবে সাজানো যায়-সে ব্যাপারে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ধীরে ধীরে কুমিল্লা শহরকে সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও সুন্দর নগরী হিসাবে গড়ে তোলা হবে। বুধবার কুসিক নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত ৩৪৩ ভোটে গত দুই মেয়াদের মেয়র বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন।
রিফাতের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার হাসিবুল হাসান ও কুমিল্লা ব্যুরোপ্রধান তাবারক উল্লাহ কায়েস
যুগান্তর : ভবিষ্যতে আপনি কি সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পরামর্শ বা সহযোগিতা চাইবেন?
রিফাত : অবশ্যই সহযোগিতা চাইব। তার যেসব ভালো কাজ এখনো শেষ হয়নি, আমি সেগুলো শেষ করব। কারণ আমি চাই, নগরের ও নগরবাসীর উন্নয়ন। তাদের ভালোর জন্য যে কোনো কাজ আমি করব। এটাতে সবার সহযোগিতা চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর নৌকা আমাকে দিয়েছিলেন। আমি কুমিল্লার মানুষের কাছে তাদের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। আমিও তাদের সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে চাই ইনশাআল্লাহ।
যুগান্তর : ভোটের ব্যবধান কম হওয়ার জন্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সেই ১৩ নেতা কাজ করেননি বলে আপনি ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার কাছে কি সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণ আছে, যদি থাকে তা দলের হাইকমান্ডকে কি জানাবেন?
রিফাত : আমার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ‘ মেসেজ’ নেই। কিন্তু আমি সবাইকে বলব, আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য-আওয়ামী লীগের জন্য। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল করি। আমরা সবাই এক জায়গায়, এক প্ল্যাটফরমে কাজ করছি। সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক জায়গা থেকে কাজ করব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। আর কারও বিরুদ্ধে হাইকমান্ডের কাছে কখনোই কোনো অভিযোগ করব না। আমি চাই সবাইকে নিয়ে কাজ করতে।
যুগান্তর : আপনি সব সময় বলেছেন-স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আপনার অভিভাবক। কুমিল্লায় নৌকার জয়, নাকি রিফাতের জয়, নাকি বাহারের জয় হয়েছে?
রিফাত : আমার বিজয়, কুমিল্লাবাসীর বিজয়। এ বিজয় আওয়ামী লীগের। এ বিজয় নৌকার। এ বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়। আর এজন্য আমি শুক্রবার আমার নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাব। অন্যদিকে তিনি (বাহাউদ্দিন বাহার) আমার অভিভাবক। এটা আজ থেকে নয়, ৪০ বছর ধরে আমি তার সঙ্গে রাজনীতি করছি। তার আশ্রয়, প্রশ্রয়, ভালোবাসায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, আমার রাজনৈতিক জীবনের সবকিছুই তার সঙ্গেই করব। আমার যখনই প্রয়োজন হবে আমি তার পরামর্শ নেব। কুমিল্লার মানুষকে বাহার ভাই যেভাবে ভালোবাসেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পরও তিনি আমাকে ওইভাবেই ভালোবাসবেন-এটাই আমার প্রত্যাশা।
যুগান্তর : ভোটের ফলাফলে পরাজয়ের পর সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলা করার কথাও জানিয়েছেন-এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
রিফাত : এটা আসলে হাস্যকর ব্যাপার। ভোটে যতগুলো কেন্দ্র ছিল, সবখানেই সাক্কু সাহেবের প্রতিনিধিও ছিল। আমার প্রতিনিধিও ছিল। সেখান থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রত্যেক পোলিং এজেন্টের কাছেই তো নির্বাচনের ফলাফলের শিট দিয়ে দিয়েছেন। ভোটে ১০৫টা কেন্দ্র ছিল। সেই কেন্দ্রগুলোর ফলাফল মেলালেই তো হয়ে যায়। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে এটা হাস্যকর।
যুগন্তর : কুমিল্লাবাসীর উন্নয়নে নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু বলবেন?
রিফাত : আমি কুমিল্লা সিটির সব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স করব। এটা যে সিটি করপোরেশনের টাকায় হবে এমন নয়। আমরা বিত্তবানদের সহযোগিতা নেব। বিনা পারিশ্রমিকে কয়েকজন চিকিৎসক এটা শুরু করবেন। এটা শুরু করবেন আমার নেতা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ভাইয়ের মেয়ে সূচনা বাহার আর আমার মেয়ে সামিয়া রিফাত। আমরা এটা দিয়ে শুরু করব। এরপর মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বসব। কুমিল্লাবাসীকে আমরা অনুরোধ করব-যত চিকিৎসক আছেন, সেবক আছেন, তারা যদি মাসে একদিন সময় দেন, তাহলে এটা শুরু করতে পারব।
যুগান্তর : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নিয়ে আপনার কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান করার ইচ্ছা আছে?
রিফাত : অবশ্যই আছে। কাল তো (বুধবার) মাত্র জিতলাম। আমি শপথের পর কাজ শুরু করব। এরপরই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কাজ করব।
যুগান্তর : সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রিফাত : যুগান্তর পরিবারের সবাইকে আমিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।